মোটরসাইকেলের ধাক্কায় কলেজছাত্রী নিহত, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

সড়ক দুর্ঘটনায় সহপাঠী নিহতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার হাসানপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পারাপারের সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সামিয়া আক্তার ওরফে মীম (১৭) নামের এক কলেজছাত্রী নিহত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া একটার দিকে উপজেলার হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সামিয়া হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে স্থানীয় তিতাস উপজেলার লালপুর গ্রামের প্রবাসী বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে সামিয়ার সহপাঠীরা। এতে মহাসড়কের গৌরীপুর থেকে দাউদকান্দি টোল প্লাজা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নিহত সামিয়ার কয়েকজন সহপাঠী জানায়, কলেজে পাঠদানের মধ্যে দুপুরের বিরতি চলাকালে সামিয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হয়ে উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছিল। তখন কুমিল্লাগামী একটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামিয়াকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সহপাঠীরা দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী স্থানীয় ঢাকারগাঁও গ্রামের সাফিন সরকার (২১) ও সিঙ্গুলা গ্রামের আবদুল করিম (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রথমে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদিকে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বাড়িতে নিয়ে যান।

প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

সামিয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

সহপাঠী নিহতের প্রতিবাদে বেলা সোয়া একটা থেকে ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে মহাসড়কের গৌরীপুর থেকে দাউদকান্দি টোল প্লাজা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকায় দুর্ভোগে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।

কলেজের শিক্ষার্থী সাথী চৌধুরী ও বৈশাখী আক্তার বলে, ‘চোখের সামনে সহপাঠীর এ রকম করুণ মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় কলেজের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে। কিন্তু কেউ কিছু করেনি।’ দ্রুত পদচারী–সেতু নির্মাণ করার ঘোষণা না দিলে তারা ২৪ ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়।

দুর্ঘটনার পরপরই দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জিয়াউর রহমান, কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার এনায়েত কবির শোয়েব, দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাম্মেল হক, হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক দফায় শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছেড়ে দিয়ে কলেজের মাঠে অবস্থান নেয়।

বিকেল সাড়ে চারটায় ইউএনও মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে হাসানপুর শহীদ সরকারি কলেজের সামনে একটি পদচারী–সেতু নির্মাণের বিষয়টি জানালে শিক্ষার্থীরা কলেজের মাঠ ছেড়ে দেয়। মাগরিবের নামাজের পর লালপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে সামিয়াকে দাফন করা হয়।

ইউএনও আরাফাতুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াগুলো যৌক্তিক। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দাবিগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আশা করছেন দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যা যা দরকার, সব পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। মঙ্গলবার বেলা তিনটায় দাউদকান্দির হাসানপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জানাজায় অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন আহমেদসহ কলেজের বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক, সামিয়ার সহপাঠী, এলাকাবাসী ও স্বজনেরা অংশ নেন। জানাজা শেষে শিক্ষক-সহপাঠীরা সামিয়ার বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন। অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদে মহাসড়ক পারাপারের জন্য একটি পদচারী–সেতু নির্মাণের জন্য প্রশাসনের কাছে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সামিয়ার স্মৃতি রক্ষায় তার নামেই সেতুটির নামকরণ করার চেষ্টা করা হবে।

এদিকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ থাকায় মহাসড়কে চলাচলকারী চালক ও যাত্রীরা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। দাউদকান্দির অন্তত দুটি স্কুলের শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। ঢাকাগামী লোকাল পরিবহনের বাসচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, অবরোধে দুই ঘণ্টার বেশি সময় সড়কে বসে থাকতে হয়েছে। এতে যাত্রী ও কর্মচারীদের দুপুরের খাবারের সমস্যায় পড়তে হয়।