বিএনপির নেতারা প্রার্থী ২৪ ওয়ার্ডে, হতাশা দলে

দলের মহানগর নেতাদের অনুরোধে দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মৌখিক ঘোষণা দিলেও বাকি ব্যক্তিরা অনড় রয়েছেন।

বরিশাল জেলার মানচিত্র

বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও বরিশালে দলটির অনেক নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে আছেন। এতে করে অস্বস্তিতে পড়েছে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

নগরের ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডের অন্তত ২৪টিতে বিএনপির পদধারী এবং সাবেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বৈধতা পেয়েছেন। ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে প্রার্থী হচ্ছেন আরও সাতজন। তাঁদের মধ্যে নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তিনজন এবং সদস্য পাঁচজন। বাকি ব্যক্তিরা ওয়ার্ড বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতা।

মেয়র পদে দলটির পদধারী কোনো নেতা প্রার্থী হননি। তবে দলের প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিবের ছেলে কামরুল আহসান ওরফে রূপণ প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়েও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন দলের মহানগরের শীর্ষ নেতারা। কামরুল আহসান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতা। তাঁর বাবা আহসান হাবিব ছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক। গত বছর মারা যান তিনি।

১৬ মে ছিল বরিশাল সিটি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ১৮ মে বাছাইয়ে বৈধতা পান প্রার্থীরা। ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। 

নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরাও নগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সভা করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য বলেছি। দুজন প্রত্যাহার করবেন বলে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। এরপরও তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।’

বরিশাল নগর বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া নেতাদের নানাভাবে বুঝিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চেষ্টা করেন মহানগরের শীর্ষ নেতারা। দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মৌখিক ঘোষণা দিলেও বাকিরা অনড় রয়েছেন। তাঁরা আদৌ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন কি না, এটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ও সাবেক কমিটির অন্তত ৯ নেতার সঙ্গে গতকাল এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশালে বিএনপির বর্তমান ও সাবেক অনেক নেতা সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। আমাদের বিশ্বাস ছিল, এসব নেতা ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবেন। এ জন্য তাঁদের দলের পক্ষ থেকে নানাভাবে বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু এতেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। দল বর্তমানে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে এক দফা আন্দোলনে রয়েছে। এমন সময় তাঁদের প্রার্থী হওয়া দল ও চলমান আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছু নয়। আমরা রীতিমতো অবাক ও হতাশ হয়েছি।’ 

বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন যাঁরা

নগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব জিয়াউল হক। তিনি মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ও বর্তমান কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবিরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। একই ওয়ার্ডে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহও প্রার্থী হয়েছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ওরফে টিপু, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির ১ নম্বর সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর আ ন ম সাইফুল আজিম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর সেলিম হাওলাদার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক নেতা ফিরোজ আহম্মেদ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক নেতা হুমায়ূন কবির প্রার্থী হয়েছেন।

এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন মহানগর বিএনপির সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর জাহানারা বেগম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মজিদা বোরহান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিনা বেগম ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন রাশিদা পারভীন।

মহানগর বিএনপির অপর একটি সূত্র জানায়, দলের মহানগর ও ওয়ার্ডগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা প্রার্থী হওয়ায় মহানগরের শীর্ষ নেতারা চাপে পড়েছেন। একসঙ্গে দলের এত নেতার বিরুদ্ধে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নিলে নগরের রাজনীতিতে বিএনপি সাংগঠনিক সংকটে পড়বে—এমন আশঙ্কায় তাঁরা হতাশাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছেন। 

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বলেন, ‘আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যাপারে বিএনপির কোনো চাপ নেই। বরং প্রার্থী থাকার পক্ষে বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীদের চাপ রয়েছে।’