কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আবারও ভেসে এল তিনটি মৃত মা কচ্ছপ, পেটে ৩১০টি ডিম

উখিয়ায় সোনার পাড়া সমুদ্র সৈকত এলাকায় একটি মৃত মা কচ্ছপ ভেসে আসে। কচ্ছপ থেকে ডিম বের করার পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহ করেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মীরাছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়া ও রামুর সমুদ্রসৈকতে আবারও জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে আরও তিনটি মৃত মা কচ্ছপ। এসব কচ্ছপের পেটে মিলেছে ৩১০টি ডিম। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া সৈকতে একটি ও রামুর রেজুখালের মোহনায় একটি মৃত কচ্ছপ ভেসে আসে। গতকাল শনিবার রাতে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে ভেসে এসেছিল আরও একটি মা কচ্ছপ।

আরও পড়ুন

অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের এসব সামুদ্রিক কচ্ছপ ডিম পাড়তে সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়িতে আসার পথে মারা পড়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি জানান, আজ ভেসে আসা দুটি কচ্ছপের পেটে ২১৫টি ডিম পাওয়া গেছে। গতকাল রাতে আসা কচ্ছপটির পেটে ছিল ৯৫টি ডিম। আজ ভেসে আসা দুটি কচ্ছপের পেছনের এবং সামনের একটি সাঁতার কাটানো পাকনা (ফ্লিপার) ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। আগে পাওয়া মা কচ্ছপগুলোর শরীরেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

তরিকুল ইসলাম বলেন, ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে কচ্ছপগুলো মারা পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ডিম পাড়তে আসা মা কচ্ছপ উদ্ধারের ঘটনা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সামুদ্রিক মা কচ্ছপের প্রজনন ভরা মৌসুম। ধারণা করা হচ্ছে, জেলেদের জালে বা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মা কচ্ছপগুলো মারা পড়ছে।

বোরির দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সোনাদিয়া, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী ও টেকনাফ সমুদ্রসৈকতে অন্তত ২৮টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গেছে।

গতকাল সকালে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে একটি মৃত মা কচ্ছপ ভেসে আসে, এটির পেটে ছিল ৯০টি ডিম। এর আগে তিন দিনে উপকূলে দেখা মিলেছে তিনটি মৃত ডলফিন, একটি মৃত পরপইস ও একটি কচ্ছপ। গত শুক্রবার সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে একটি ও ইনানী সৈকতে একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার হিমছড়ি সৈকতে মৃত ভেসে আসে আরও একটি ইরাবতী ডলফিন। বুধবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে একটি মৃত পরপইস। বৃহস্পতিবার সমুদ্রসৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে এসেছিল।

কয়েক দিন ধরে ভেসে আসা মৃত সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক তৌহিদা রশীদ। তিনি বলেন, বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ–সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সমুদ্রসৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। এ ছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুই দিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।