পানি সংরক্ষণ করে সবজি চাষ 

মিঠা পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সারা বছর বিষমুক্ত সবজি চাষ করে শেফালী বেগমের ভাগ্য ফিরেছে। 

খেতে সবজি পরিচর্যা করছেন শেফালী বেগম। পাশেই ছোট খালে সংরক্ষণ করেছেন মিঠা পানি। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামাইয়া ইউনিয়নের চুঙ্গাপাশা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বিয়ের পর স্বামীর সংসারের এসে অভাব-অনটনে দিন কাটছিল শেফালী বেগমের। স্বামী ওসমান গনি অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। বাড়তি আয়ের জন্য শেফালী অন্যের বাড়িতে কাজ করতে থাকেন। তবুও সংসারে অভাব যাচ্ছিল না। চার বছর আগে ঘরের পাশে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। এর মাধ্যমে তাঁর সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।

১৫ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা বাগানটি এখন বিভিন্ন মৌসুমি শাকসবজিতে ভরা। মিঠা পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সারা বছর বিষমুক্ত সবজি চাষ করে শেফালী বেগমের (৪০) ভাগ্য ফিরেছে। এখন তিনি এই সবজিবাগানে সবজি চাষ করেন। ওসমান গনি বাজারে সেই সবজি বিক্রি করেন।

এ দম্পতির বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামাইয়া ইউনিয়নের চুঙ্গাপাশা গ্রামে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৫ শতাংশ জমিতে তাঁরা সবজি চাষ শুরু করেছিলেন। এখন তাঁরা ৩৬ শতাংশ জমিরমালিক। কিনেছেন একটি গাভিও। 

এ দম্পতির এই সাফল্যে অন্যরাও মিঠা পানি সংরক্ষণ করে বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ওই গ্রামের অন্তত সাতজন বিষমুক্ত সবজি চাষ করেন। এ ছাড়া ইউনিয়নের বাইনবুনিয়া ও আনিপাড়া গ্রামেও আরও ১০ জন এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাঁদের সার-বীজ প্রণোদনাসহ চাষাবাদে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার উত্তরে চুঙ্গাপাশা গ্রাম। সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, শেফালী বেগমের বসতঘরের পাশে সবজিখেত। খেতের মাঝ দিয়ে তিন সারিতে সরু খাল কেটে মিঠা পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে। খালের ওপর মাচায় বড় বড় লাউ ঝুলে রয়েছে। খেতে ফুলকপি, বাধাকপিসহ নানা জাতের সবজির পরিচর্যায় ব্যস্ত শেফালী বেগম। পাশে তাঁর স্বামী ওসমান গনিও রয়েছেন। 

খেত পরিচর্যার ফাঁকে ফাঁকে শেফালী বেগম বলেন, বছর চারেক আগে একদিন গ্রামে ফ্রেন্ডশিপ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার মাঠকর্মী আসেন। তাঁদের কাছ থেকে সবজি চাষের পরামর্শ পান। ওই সংস্থার কর্মীরাই সবজিবীজ দেন। ওই বীজ দিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ঘরের পাশে সবজিবাগান। জৈব সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। 

প্রথমে অল্প জমিতে লাউ চাষ করেন শেফালী বেগম। পরে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, পেঁপে, ঢ্যাঁড়সসহ নানা শাকসবজি চাষ করতে থাকেন। গত বছর তরমুজের আবাদও করছেন তিনি। মৌসুমভিত্তিক শাকসবজি চাষ করে প্রতি মাসে তাঁর প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। তিনি সবজি চাষে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। সংরক্ষণ করা মিঠা পানি ও জৈব সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি ফলাচ্ছেন তিনি।

ওসমান গনি বলেন, সবজিখেতে তাঁর স্ত্রীকে সহায়তা করেন। প্রতিদিন সকালে খেতের টাটকা শাকসবজি বাজারে বিক্রি করতে যান তিনি। বাড়তি আয়ে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। তাঁরা ৩৬ শতাংশ জমি কিনেছেন। দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ্ প্রথম আলোকে বলেন, সবজি চাষ, বিশেষ করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে শেফালী বেগমের আগ্রহ রয়েছে। রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকেও নিরাপদ তাঁর সবজি। পোকা দমনে ব্যবহার করছেন আলোর ফাঁদ পদ্ধতি। ফলে ছোট পোকা ফসলের ক্ষতি করতে পারে না। ওই এলাকায় অনেকেই তাঁর দেখাদেখি এভাবে সবজি চাষ শুরু করেছেন।