ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাঁচ দিন পর মামলা, গ্রেপ্তার হননি কেউ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে বিএনপি নেতা মফিজুর রহমান আহত হওয়ার পাঁচ দিন পর মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রী রোমানা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হননি। পুলিশ জানিয়েছে, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখেই ঘটনার তদন্ত চলছে।
মফিজুর রহমান ওরফে মুকুল (৫২) নবীনগর পৌর এলাকার পদ্মপাড়ার বাসিন্দা। তিনি নবীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুটি গুলি পিঠে ও একটি কোমরের নিচে বিদ্ধ হয়েছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলির ঘটনায় অজ্ঞতানামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামার সংখ্যাও উল্লেখ নেই। তবে আমাদের তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। সময় হলে সব উন্মোচন করা হবে। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলছি না।’
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মফিজুর রহমান গত শুক্রবার রাতে উপজেলা পৌর এলাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। রাত আনুমানিক ৮টা ১০ মিনিটে পৌর এলাকার আদালতপাড়া অতিক্রম করে বাড়ির কাছে পৌঁছে ফটক দিয়ে প্রবেশের সময় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে তাঁকে তিনটি গুলি করে। দুটি গুলি তাঁর পিঠে এবং একটি কোমরের নিচে লাগে। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘটনার কয়েক দিন আগে একটি নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলা বিএনপির রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। জেলা বিএনপির অর্থনেতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন (তাপস), উপদেষ্টা তকদির হোসেন মো. জসিম, উপজেলা বিএনএপির সভাপতি এম এ মান্নান আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের মনোয়নপ্রত্যাশী। কাজী নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা একটি পক্ষে এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হকের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের আরেকটি পক্ষ রয়েছে। গুলিবিদ্ধ বিএনপির নেতা মফিজুর রহমান কাজী নাজমুল হোসেনের অনুসারী।
বিএনপির নেতা–কর্মীরা জানান, উপজেলার পদ্মপাড়া একটি মাদকপ্রবণ এলাকা। মফিজুর রহমান এলাকায় সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। যেদিন তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, সেদিনই তাঁর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উপজেলার রাজনীতিতে বিভক্তি থাকলেও কারও সঙ্গে মফিজুর রহমানের কোনো বিরোধ নেই।
মফিজুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থান করছেন জেলা বিএনপির সদস্য হযরত আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুকুল ভাইয়ের অবস্থা কিছুটা শঙ্কামুক্ত।এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁর সিটিস্ক্যান করার পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনটি গুলি তাঁর মূত্রথলি, কিডনি ও লাংসে ইফেক্ট করেছে। তবে একটি গুলি ফুসফুস থেকে বের করা হয়েছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) পিয়াস বসাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাব—তিন সংস্থা মিলে ঘটনার তদন্ত করেছে। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মাথায় রেখেই আমরা পৃথকভাবে তদন্ত করছি। আবার এটি চুরি, ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের র্যানডম কোনো ঘটনা কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’