রাজবাড়ী
পদ্মায় বেড়া দিয়ে মাছ শিকার
গোয়ালন্দের চর করনেশনা থেকে সদর উপজেলার গুদারবাজার পর্যন্ত ১০টি বাঁশের বেড়া রয়েছে।
■ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতা নিয়ে স্থানীয় লোকজন মাছ শিকার করছেন।
■ ২৮ অক্টোবর ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর এসব বেড়া দেওয়া হয়।
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটারে অন্তত ১০টি বাঁশের আড়াআড়ি বেড়া রয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ অঞ্চলের জেলেরা মাছ শিকার করছেন। এসব বেড়ার কারণে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর করনেশনা থেকে সদর উপজেলার গুদারবাজার পর্যন্ত ১০টি বাঁশের বেড়া দেখা যায়। এর মধ্যে দৌলতদিয়া চর করনেশনা ও আংকের শেখ পাড়ায় দুটি, কুশাহাটায় একটি, দেবগ্রামের অন্তারমোড় দুটি, চর দেলন্দি দুটি, বেতকায় একটি, রাজবাড়ী সদর উপজেলার গুদারবাজার ও নয়নসুখ দুটি বেড়া রয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর ইলিশ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর পদ্মা নদীতে এসব বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়।
দৌলতদিয়া চর করনেশনায় নদীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একটি এবং আংকের শেখের পাড়ায় ছোট বাঁশের একটি আড়াআড়ি বেড়া রয়েছে। বেড়া দুটি পাবনার জেলেরা দিলেও দেখভালের দায়িত্বে দৌলতদিয়া ঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ইসহাক সরদার ও মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহন মণ্ডল।
গত রোববার দুপুরে দৌলতদিয়ার চর করনেশনা ও আংকের শেখের পাড়ায় বেড়া দুটির কাছাকাছি নৌকা দেখা গেলেও জেলেদের কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কয়েকজন জানান, জেলেরা দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে থাকেন। সন্ধ্যার পর পুনরায় বেড়া দুটির কাছে এসে অবস্থান নেন।
দৌলতদিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ইসহাক সরদার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি আগে এর সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তবে এখন এর সঙ্গে নেই। বেড়া দুটি দেখাশোনা করেন মোহন মণ্ডল। তাঁর আড়তের জেলেরা বেড়া দুটি দিয়েছেন।’ আর মোহন মণ্ডল বলেন, ‘পাবনার জেলেরা এই অঞ্চলে মাছ শিকার করে আমার আড়তে বিক্রি করেন, এটিই আমার লাভ। এ ছাড়া অন্য কোনো স্বার্থ নেই।’
কুশাহাটার বেড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে মওলা শেখ বলেন, ‘আগে একসময় ছিলাম। এখন আমি নদীতে এ ধরনের বেড়া দেওয়ার সঙ্গে জড়িত নেই।’
দেবগ্রাম ইউনিয়নের চর দেলন্দি এলাকায় পদ্মা নদীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে বাঁশের আড়াআড়ি বেড়া। বেড়ার পর বালুর চর পেরিয়ে নদী পথে আরেকটি আড়াআড়ি বেড়া। এই দুটি বাঁশের বেড়া ৩০ অক্টোবর দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে পাবনার ত্রিমহোনী অঞ্চলের জেলেরা এই বেড়া দুটি স্থাপন করেছেন।
গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, বেড়া দুটির পাশে ৮-১০টি জেলে নৌকা। বেড়ার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সুতি জাল দিয়ে আটকানো। মাঝে তিনটি স্থানে জালের বিশেষ ফাঁদ পাতা রয়েছে। বেড়ার সঙ্গে বাধা পেয়ে ফাঁদে ইলিশ, পাঙ্গাশ, রুই, কাতলা, আইড়, বোয়ালসহ বিভিন্ন মাছ আটকা পড়ে। সুতি জালে জাটকাসহ ছোট মাছ আটকা পড়ে। বিপরীত পাশে নদীতে বসানো আরেকটি
বেড়া রয়েছে।
এ সময় নদীর পাড়ে অপেক্ষারত চার জেলের একজন খায়রুল খাঁ বলেন, এখানে ১০ জন ভাগীদার রয়েছেন। পাবনা অঞ্চলের পাঁচজন এবং স্থানীয় পাঁচজন। আরেক অংশীদার আক্কাছ খাঁ বলেন, প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা বেড়াটি দিতে তাঁদের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অন্য পেশা জানা না থাকায় কষ্ট হলেও ১০ জনে মিলে বেড়াটি দিয়েছেন। এখন নদীতে মাছ ধরা পড়ছে না। আশায় আছেন সামনে মাছ ধরা পড়বে।
গোয়ালন্দের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ মো. শাহরিয়ার জামান বলেন, নদীতে বেড়া দেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত, তাঁদের নোটিশ দিয়ে দ্রুত সরাতে বলবেন। নির্দেশ না মানলে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, নদীতে আড়াআড়ি বাঁশের বেড়া দেওয়া বড় ধরনের অন্যায়। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।