কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চালক মনির হোসেন ওরফে ফয়সাল (১৭) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাশেদুল আমিন তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আলী আকবর (২২) ও মো. রাকাত (১৮) জানান, হাতখরচের টাকা জোগাড় করতে গত বছরের ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় তিন বন্ধু মিলে অটোরিকশাচালক মনিরকে হত্যা করে তাঁর অটোরিকশাটি ছিনতাই করেন। পরে অটোরিকশা বিক্রি করে পাওয়া ১ হাজার ৫০০ টাকা তিন বন্ধু মিলে ভাগ করে নেন। প্রত্যেকে ভাগে পান ৪০০ টাকা করে। বাকি ৩০০ টাকা তাঁদের খরচ হয়। পিবিআইর কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আলী আকবর কটিয়াদী উপজেলার পশ্চিম মন্ডলভোগ বেপারীপাড়ার ইমতিয়াজ মিয়ার ছেলে। আর রাকাতের বাড়ি বাজিতপুর উপজেলার পূর্ব কুতুবপুর গ্রামে। বাবার নাম আ. কুদ্দুস। রাকাতকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে কুতুবপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। আগের দিন রাতে মণ্ডলভোগ এলাকা থেকে আলী আকবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। অটোরিকশাচালক মনির বাজিতপুর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।
পিবিআইর কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিট থেকে জানানো হয়, জবানবন্দিতে আলী আকবর ও রাকাত উল্লেখ করেন, কটিয়াদীর মাগুরা বাজারে আলী আকবরের একটি সেলুন আছে। রাকাত আলী আকবরের বন্ধু। ঘটনার দিন রাকাতের সঙ্গে সেলুনে আসেন তাঁদের আরেক বন্ধু কাউসার। তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় হাতখরচের জন্য তিন বন্ধু মিলে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তাঁরা সরারচর বাজারে একটি ওয়াজ মাহফিলে যান। বাজিতপুরের উজানচর এলাকায় যাবেন বলে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মনিরের অটোরিকশাটি ২০০ টাকায় ভাড়া নেন কাউসার। কাউসার বসেন পেছনে। রাকাত চালকের ডানে এবং বাঁয়ে বসেন আলী আকবর। সরারচর বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার পর চালককে পেছনের দিক দিয়ে রশি দিয়ে গলা চেপে ধরেন কাউসার। শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তালতলা এলাকায় লাশ ফেলে দেওয়া হয়। পরে রাকাত অটোরিকশাটি চালিয়ে একটি গ্যারেজে নিয়ে চার্জ দেন। রাতে তাঁরা চলে যান। সকালে এসে অটোরিকশাটি বাজিতপুর উপজেলার দুম্মাপুর এলাকার সাদ্দাম ভাঙারির কাছে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
এ ঘটনায় নিহত মনিরের বাবা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ২৪ মে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে। পিবিআইর পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ রোমান মামলাটির তদন্ত করেন।
পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, খুন করেছেন তিন বন্ধু। তিনজনের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।