শরৎচন্দ্র দাশ থেকে হানিফ সংকেত, শত কীর্তিমান জন্ম দিয়েছে এই স্কুল
১৮০ বছরের পুরোনো পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের এক গর্বের নাম। ইতিহাসবিদ, সাহিত্যিক, কবি, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে টিভি ব্যক্তিত্ব—এই একটি বিদ্যালয় জন্ম দিয়েছে শত কীর্তিমান। শিক্ষকদের নিরলস চেষ্টা, সমৃদ্ধ পাঠাগার আর কঠোর নিয়মনিষ্ঠার কারণে বিদ্যালয়টি আলো ছড়িয়েছে। হয়ে উঠেছে সত্যিকারের একটি জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র।
পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের নাম বলতেই চট্টগ্রাম শহর থেকে ছেড়ে আসা বাসটি একেবারে স্কুলের ফটকে নামিয়ে দিল। ফটকে ধাতব ফলকে বড় করে বিদ্যালয়ের নাম লেখা। সেদিক দিয়ে ঢুকতেই সাবেকি আমলের টিনের ছাউনির একটা বাংলো প্যাটার্নের ঘর। টানা বারান্দার এক কোণের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নাম। পাশেই শহীদদের তালিকা। এসব দেখতে দেখতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এসে পড়ি। সেখানে দুটি বড় সাদা বোর্ডে বিদ্যালয়ের কীর্তিমান ছাত্রদের নাম। তালিকায় চোখ বোলাতে বোলাতে বিস্ময় জাগে। দেশ–বিদেশে আলো ছড়ানো সব কীর্তিমান যেন এক জায়গায় জড়ো হয়েছেন।
বিশদে না গিয়ে কেবল কয়েকটা নাম বললেই বোঝা যাবে বিষয়টি। প্রথম ভারতীয় তিব্বতজয়ী ইতিহাসবিদ শরৎচন্দ্র দাশ, কংগ্রেস নেতা ও ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রাখা যাত্রামোহন সেন, কবি ও ম্যাজিস্ট্রেট নবীনচন্দ্র দাশ, সাহিত্য বিশ্লেষক ও রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য শশাঙ্ক মোহন সেন, পুঁথি সংগ্রহক ও বাংলা সাহিত্যের অনন্য বিশ্লেষক মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, গণিতবিদ কামিনী কুমার দে, অবিভক্ত বাংলার খাদ্যমন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ কিংবা গবেষক ড. আহমেদ শরিফের নাম রয়েছে সেখানে। বিদ্যালয়ের কীর্তিমানদের তালিকা বা ইংরেজিতে যাকে বলে ‘হল অব ফেইম’ তার খুবই ছোট অংশ এটি।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নাগরিক সুযোগ–সুবিধার বাইরে পটিয়া উপজেলা সদরে শত কীর্তিমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়। ১৮০ বছরের পুরোনো এই বিদ্যালয় সরকারি নয়। অনেক আবেদন–নিবেদন করে বিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তবে তাতে এই শিক্ষায়তনের মাহাত্ম্য কিছুমাত্র কমেনি। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কয়েকজন এর কারণও জানালেন, শিক্ষকদের নিরলস চেষ্টা, সমৃদ্ধ পাঠাগার আর নিয়মনিষ্ঠার কারণেই এমন সাফল্য এসেছে। বিদ্যালয়টি হয়ে উঠেছে সত্যিকারের একটি জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র।
যেভাবে শুরু
পটিয়া উপজেলায় যে কয়জন সক্রিয় সামাজিক সংগঠক ও সাহিত্য অনুরাগী আছেন, তাঁদের একজন মিজানুর রহমান। পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষকও তিনি। অবসর নিলেও বিদ্যালয়ের টানে প্রায়ই চলে আসেন। গত মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়টিতে গেলে প্রধান শিক্ষককের কক্ষেই দেখা হয়ে যায় তাঁর সঙ্গে। আলাপ জমে ওঠে বিদ্যালয়ের প্রধান বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিক্ষক সুনিল কুমার বড়ুয়াসহ উপস্থিত শিক্ষকদের সঙ্গে। এক ফাঁকে জানতে চাইলাম বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরুর ইতিহাস। কথা বলতে বলতে সাবেক প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান কক্ষের বড় এটি আলমারি খুলে বের করে আনলেন পুরোনো কিছু ফাইলপত্র। সেখানে যত্নে রক্ষিত আছে সাহিত্যিক মাহবুবুল আলমের লেখা পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের ইতিহাসসংক্রান্ত সচিত্র একটি পুস্তিকা। শিক্ষকদের আলাপে আর ওই বইয়ের সূত্রে অনেক কথাই জানা গেল।
১৮৪৫ সালের কথা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনপদ তখনো শিক্ষায় অনগ্রসর। শিক্ষাকেন্দ্র বলতে ছিল কিছু মক্তব আর টোল। এমন একটা সময়ে পটিয়ার দক্ষিণ ভূর্ষি গ্রামের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত দুর্গাকিঙ্কর দত্ত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। মাটির ঘরে শুরু হওয়া সেই বিদ্যালয় পরিণত হয় প্রকৃত জ্ঞান চর্চাকেন্দ্রে। তিব্বতজয়ী ইতিহাসবিদ শরৎচন্দ্র দাশ, কংগ্রেস নেতা ও ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রাখা যাত্রামোহন সেন, কবি ও ম্যাজিস্ট্রেট নবীনচন্দ্র দাশ, সাহিত্য বিশ্লেষক ও রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য শশাঙ্ক মোহন সেন, পুঁথি সংগ্রহক ও বাংলা সাহিত্যের গবেষক মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ থেকে শুরু করে জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত—সবাই পড়েছেন এখানে।
১৮৪৫ সালের কথা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনপদ তখনো শিক্ষায় অনগ্রসর। শিক্ষাকেন্দ্র বলতে ছিল কিছু মক্তব আর টোল। যেখানে সীমিত ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে কিছু নামতা, জাবেদা শেখানো হতো। মিলত প্রাথমিক অক্ষরজ্ঞানও। এমন একটা সময়ে পটিয়ার দক্ষিণ ভূর্ষি গ্রামের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত দুর্গাকিঙ্কর দত্ত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। মাটির একটি ঘরে চালু করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখান থেকেই শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির পথচলা। কিছু নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের পাশাপাশি জোগাড় হয় কিছু ছাত্রও। সে সময় পটিয়ার মুসলিম জমিদার মীর এয়াহিয়াও একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাফল্য আসেনি। পরে দুর্গাকিঙ্করের চেষ্টায় ওই বিদ্যালয়টিও পটিয়া আদর্শ বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত হয়। বাড়ে বিদ্যালয়ের জমি। সরকার তখন মীর এয়াহিয়া এস্টেটের সাহায্যে বিদ্যালয়টির জন্য মাসিক ৩৫ টাকা বরাদ্দ করে দেয়। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ সাহায্য অব্যাহত ছিল। আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি মেলে স্বীকৃতিও। বিদ্যালয়টি মধ্যম ইংরেজি স্কুলে উন্নীত হয়। আর ১৮৬৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতিও লাভ করে।
১৮৬৭ সালে এই বিদ্যালয় থেকে প্রথমবারের মতো তিনজন শিক্ষার্থী এন্ট্রান্স পরীক্ষায় (প্রবেশিকা পরীক্ষা) অংশ নেন। যাঁদের মধ্যে উমাচরণ খান্তগীর নামের একজন কেবল পাস করেন। উমাচরণ পরে সাব-জজ হলে তাঁর কল্যাণেই ছড়িয়ে পড়ে বিদ্যালয়ের সুনাম। কেবল পটিয়া নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও কক্সবাজার থেকেও ছাত্ররা আসতে থাকেন বিদ্যালয়টিতে। এরপর কেবলই সাফল্যের গল্প। ১৮৭৮ সালে স্কুলটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে রূপ নেয় এবং পরবর্তী এক দশকে সেখান থেকে উঠে আসেন একঝাঁক কৃতী শিক্ষার্থী।
১৯১২ ও ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সরকার বিদ্যালয়টির জন্য ১০ দশমিক ৬১ একর জমি অধিগ্রহণ করে। ওই জমি পাওয়ার পর তৈরি হয় নতুন ভবন। ১৯৬২ সালে পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আড়াই একর জমি দান করলে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় পটিয়া কলেজ। এভাবে বিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষা বিস্তারেও ভূমিকা রাখে।
বিদ্যালয়ের কীর্তিমানেরা
বিদ্যালয়ের কিছু কৃতী ছাত্রের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। জেনে নেওয়া যাক আরও কিছু নাম। বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন কবিগুণাকর উপাধিপ্রাপ্ত কবি ও ম্যাজিস্ট্রেট নবীণ চন্দ্র দাশ, রিপন পদকপ্রাপ্ত অন্নদা চরণ শর্মা, ‘সপ্তকান্ড রাজস্থান’ বইয়ের রচয়িতা কবি বিপিন বিহারী নন্দী, বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা মহিম চন্দ্র দাশ, ‘জ্যোতি’ পত্রিকার সম্পাদক কালি শংকর চক্রবর্তী, গণিতের খ্যাতনামা অধ্যাপক করুণাময় খান্তগীর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক গণিতবিদ ড. আতাউল হাকিম, ‘ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ’ বইয়ের রচয়িতা অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র সিংহ, মাস্টার দা সূর্য সেনের শিষ্য বিপ্লবী মনিন্দ্র লাল গুহ, কানাডা কুইন্স ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র সেন, পদার্থবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও টিভি ব্যক্তিত্ব এবং ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির উপস্থাপক হানিফ সংকেত। তালিকা তবু যেন শেষ হওয়ার নয়।
নেহরু থেকে বঙ্গবন্ধু
বিদ্যালয়ের অনেক পুরোনো ফাইলপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক তথ্য জায়গা ও অর্থের অভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। তবু যেসব নথি রয়ে গেছে সেসব এখনো কথা বলে। জানা গেল, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান থেকে শুরু করে বহু রাজনীতিবিদ বিদ্যালয়ের মাঠে জনসভা করেছেন। সাবেক প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানালেন, কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র সেন কয়েক বছর আগে তাঁর ছেলেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। মিজানুর তখন তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। সে সময় পরেশ চন্দ্র তাঁদের জানিয়েছিলেন, ১৯৪৩ সালে নেহরু যখন বিদ্যালয় মাঠে সভা করতে আসেন, তখন তিনি একটি চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছিলেন। আর পরেশ চন্দ্র সেই চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যাতে নেহরু পড়ে না যান। এরপর ষাট–সত্তরের দশক থেকে প্রায় প্রতিবছরই বিদ্যালয়ের মাঠে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক নেতা এসেছেন।
‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখন স্কুলের নিয়মকানুন ছিল অত্যন্ত কঠোর। টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করলে কেউ ম্যাট্রিকে বসতে পারত না। শিক্ষকেরা ছিলেন নিষ্ঠাবান, সময়নিষ্ঠ। কিন্তু এসব কঠোরতা আমাদের ভিত গড়ে দিয়েছে। পাঠাগারে ছিল শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, এমনকি তুলট কাগজের পুঁথিও। আমাদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল স্কুল থেকেই। আজকে যাঁরা ভাবছেন, এই স্কুলে এত কীর্তিমান কীভাবে হলো—উত্তরটা লুকিয়ে আছে ওই শৃঙ্খলা আর জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যে।’অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড
এখনকার অবস্থা
১৮০ বছর আগে বিদ্যালয়টি যে মাটির ঘরে শুরু হয়েছিল, সেটির ওপর সিমেন্টের আস্তর দেওয়া হয়েছে। টিনশেডের ওই ভবনটি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে শিক্ষকদের অফিস কক্ষ হিসেবে। সেখানকার একটি বড় কক্ষ একসময় ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেটি এখন মিলনায়তন। মাঝখানে গাছে ঘেরা মাঠ আর চারদিকে সারি সারি ৬টি ভবন। রয়েছে বহু প্রাচীন বইসহ একটি পাঠাগার। পাঠাগারে তুলট কাগজে হাতে লেখা পুঁথি, রবীন্দ্র নজরুল রচনাবলী, বাংলা বিশ্বকোষ, সংস্কৃতি ইংরেজি ডিকশনারিসহ প্রায় ৬ হাজার বই রয়েছে। তবে অনেকগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। বিদ্যালয়ের আঙিনায় দাঁড়ালে সবুজে চোখ জুড়িয়ে যায়। দুটি বড় মাঠের একটির চারদিকে সারি সারি বকুলগাছ। সেসবের ছায়ায় হাঁটলে মনে হবে বকুল বিছানো পথ। বিদ্যালয়ে রয়েছে দুটি আধুনিক ডিজিটাল ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ আর বিজ্ঞানাগার।
১ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ ৩১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন বিদ্যালয়ে। এর মধ্যে সরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১৫ জন। কর্মচারী রয়েছেন ৫ জন। বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুনিল কুমার বড়ুয়া বলেন, পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সমগ্র পটিয়া তথা গোটা দেশে শিক্ষা-ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা একটি নাম। এই ঐতিহ্যের যাতে ছেদ না পড়ে, সে জন্য তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসএসসিতেও ভালো ফল করছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিদ্যালয় থেকে ২৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২৩৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯০ শতাংশ।
যা বলছেন প্রাক্তন ছাত্ররা
পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের কীর্তিমান প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে অনেকে দেশের নানা ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এঁদেরই একজন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী। চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ ও সরকারি কমার্স কলেজেরও অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক ১৯৬৮ সালে পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করেন। তাঁর কাছে স্কুলজীবনের স্মৃতি জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম, তখন রমেশ চন্দ্র গুপ্ত ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। খুব নামকরা শিক্ষক ছিলেন তিনি। স্কুলের নিয়মনীতি খুবই কঠোর ছিল। শিক্ষকেরা ছিলেন নিষ্ঠাবান। টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করলে কেউ ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে পারত না। এসব কারণে স্কুলটি বরাবরই ভালো করেছে।’
বিদ্যালয়টি থেকে এত কীর্তিমানের জন্ম কীভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই যে বললাম, কঠোর নিয়মনীতি আর নিষ্ঠাবান শিক্ষক—এটাই বিদ্যালয়টির সাফল্যের মূল কারণ। সম্ভবত এই ঐতিহ্যের পরম্পরা নিয়েই বিদ্যালয়টি এগিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ পাঠাগারও আমাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে দিয়েছিল। আমি নিজে শরৎচন্দ্রের উপন্যাস পড়েছি স্কুলের পাঠাগার থেকে।’
সরকারীকরণের দাবি
১৮০ বছরের পুরোনো বিদ্যালয়টি সরকারি নয়। বারবার আবেদন করা হলেও সরকার সাড়া দেয়নি। বিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষক এখনো সরকারি বেতন–ভাতার সুবিধার বাইরে। শিক্ষার্থীদের সরকারি স্কুলের তুলনায় অনেক বেশি বেতন দিতে হচ্ছে। সরকারীকরণের দাবিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেকবার আন্দোলনও করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান বলেন, পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়—এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আলোকিত মানুষের উৎস। কিন্তু সরকারীকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী বলেন, এরশাদ সরকারের সময় পটিয়ার এই বিদ্যালয়সহ আরও একটি বিদ্যালয়কে একীভূত করে একটি সরকারি স্কুল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি একটি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের আপত্তির কারণে। এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কি না, তা তাঁর জানা নেই।