ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাব
কক্সবাজার উপকূলে জলোচ্ছ্বাস আতঙ্ক, উত্তাল সাগরে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’–এর প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল উত্তাল হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে কক্সবাজারকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ছে।
গতকাল সোমবার মধ্যরাত রাত থেকে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দমকা হাওয়া বইছে। এমন আবহাওয়ার মধ্যেই আজ সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্টে তিন শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বিসর্জন শুরু হবে বিকেল পাঁচটায়।
এদিকে উত্তাল সাগরে এখনো চলাচল করছে যাত্রীবাহী নৌযান। ঝুঁকি নিয়ে সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলার মানুষ ছোট নৌযান নিয়ে কক্সবাজারে আসা যাওয়া করছেন। তবে সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে টেকনাফের নৌচলাচল বন্ধ আছে। সেখানে আটকে পড়া শতাধিক পর্যটক হোটেলে অবস্থান করছেন।
আজ দুপুর ১২টায় সেন্ট মার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে সেন্ট মার্টিনে হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। গতকাল প্রচারণা চালিয়ে দুই হাজার পর্যটকতে তিনটি জাহাজে টেকনাফ ফেরত পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট শতাধিক পর্যটক নিজেদের ইচ্ছায় দ্বীপে থেকে গেছেন। তাঁদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় হামুন উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর নাগাদ ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে এটি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল হামুন। এটি কক্সবাজার থেকে ৪১০ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
উপকূলে জলোচ্ছ্বাস আতঙ্ক
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক সমুদ্র উপকূলের ১২টি গ্রামে বসবাস ৬০ হাজারের বেশি শ্রমজীবী মানুষের। শুঁটকি উৎপাদনের ৭০০টি মহাল রয়েছে এখানে। বেড়িবাঁধ না থাকায় সমুদ্রের পানি ঢুকে এই এলাকার লোকজনের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়।
১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি হলেও ঘূর্ণিঝড়ের তেমন প্রভাব পড়েনি এখনো। আজ রাতের মধ্যে জোয়ারের পানি গ্রামে ঢুকে গেলে তখন লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরানো হবে।
এ ছাড়া ভাঙা বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে আছেন সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৭০০ পরিবার। বেড়িবাঁধের বাইরে পরিবারগুলোর ঘরবাড়ির অবস্থান। জোয়ারের পানিতে এসব ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মীর কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এই কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি সাগরে তলিয়ে গিয়েছিল। প্রাণহানি ঘটেছিল কয়েক হাজার মানুষের। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে গতকাল রাত থেকে সাগর উত্তাল রয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস হলে বহু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, অধিকাংশ ঘর মাটির দেয়াল ও ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে তৈরি।
কুতুবদিয়ার মতো মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে আছে। ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানলে এসব গ্রামের ৩০-৪০টি ঘরবাড়ি বিলীন হতে পারে।
উত্তাল সাগরে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে প্রতিবারের মতো এবার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে পর্যটকদের তেমন একটা ভিড় নেই। বিসর্জন উৎসবেও লোকজনের উপস্থিতিও কমে যেতে পারে।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ বলেন, এবারের বিসর্জন উৎসবে চার লাখ মানুষের সমাগম আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এবং ভারী বৃষ্টি শুরুর কারণে লোকসমাগম কমে যেতে পারে। চকরিয়া শতাধিক প্রতিমা সেখানকার মাতামুহুরী নদী, রামুর শতাধিক প্রতিমা বাঁকখালী নদী এবং কক্সবাজার পৌরসভাসহ অন্যান্য এলাকার প্রায় ৩০০ প্রতিমা সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্টে বিসর্জনের প্রস্তুতি চলছে।
বিকেল চারটার আগে সব প্রতিমা সৈকতের বালুচরে নিয়ে আসা হবে। সেখানে স্থাপিত মুক্তমঞ্চে আলোচনাসভা শেষে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে বিকেল পাঁচটায় প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দুর্যোগের মধ্যেও প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূল উত্তাল হলেও ঝুঁকি কম। কারণ, ঘূর্ণিঝড় হামুন ভোলা উপকূলে আঘাত হানবে বলে জানা গেছে।