বাবার বিলাপের মধ্যেই ৩৬ ঘণ্টা পর মিলল ছেলের লাশ

সাগরে গিয়ে নিখোঁজ কুমিরা জেলেপাড়ার তরুণ জেলে আশু জলদাসের লাশ উদ্ধার করা হয়েছেছবি: সংগৃহীত

নৌকা নিয়ে সাগরে গিয়ে নিখোঁজ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এক জেলের লাশ প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম আশু জলদাস। আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আকিলপুর সৈকত এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার ভোররাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি।

নিহত আশু জলদাস কুমিরা দক্ষিণ জেলে পাড়ার বাসিন্দা রাম জলদাসের ছেলে। আশু জলদাসের চাচা কৃষ্ণ মোহন জলদাস প্রথম আলোকে বলেন, বালু তোলার একটি ড্রেজারের চালক জলদাসের লাশ দেখতে পেয়ে এলাকায় খবর দেন। পরে তাঁরা গিয়ে লাশ উদ্ধার করেন।

সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক রাজীব পোদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, আশু জলদাস নিখোঁজের বিষয়ে শুক্রবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। আজ বিকেলে আকিলপুর সমুদ্রসৈকতে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।

বাবার বিলাপ

সাগরের তীরে শোঁ শোঁ বাতাসের মধ্যেও দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল বিলাপের ধ্বনি। কান্নাজড়িত আকুল কণ্ঠের ডাক, ‘ও পুত, পুতরে’ সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল। গতকাল বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা উপকূলের স্লুইসগেট এলাকায় এভাবে চিৎকার করে ছেলেকে খুঁজতে দেখা যায় জেলেপাড়ার বাসিন্দা রাম জলদাসকে। ভোর থেকেই থেকে স্লুইসগেট থেকে জেটিঘাট পর্যন্ত ছোটাছুটি করছিলেন তিনি। কখনো ছেলেকে ডাকতে ডাকতে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। কিন্তু যে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে তাঁর এই বুকভাঙা কান্না আর আর্তি, সেই সমুদ্র নিশ্চল-নিরুত্তরই রয়ে গেল।

ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান বাবা রাম জলদাস। প্রতিবেশীরা তাঁকে ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। আজ সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরার স্লুইস গেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাম জলদাসকে তাঁর সঙ্গে থাকা ছোট ছেলে বাসুদেব জলদাস ও প্রতিবেশীরা থাকলেও কেউ শান্ত করতে পারছিলেন না। সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে ক্ষণে ক্ষণে চিৎকার করে তিনি বলছিলেন, ‘ও পুত তুই ফিরি আয়, তোর লাই আই মরি যায়ুমগইরে পুত।’ কখন ছেলে তাঁর জন্য কী এনেছে, সে কথাও ফিরে ফিরে বলছিলেন। কিছুদিন আগেই একজোড়া গামবুট এনেছিল আশু জলদাস। বাবার পা কাদা থেকে রক্ষা করতেই বুটজোড়া কেনা। সে কথা মনে করে রাম জলদাস বলছিলেন, ‘আঁর পুতে আঁর পা বাঁচাইবার লাই গামবুট লই আইচ্ছে। হেই পুত কডে গেল গই।’ ছোট ছেলে বাসুদেবকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করতে থাকলে স্থানীয় লোকজন রাম জলদাসকে একটি দোকানে নিয়ে শুইয়ে দেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় রুহি জলদাসের নৌকায় চাকরি করতেন আশু জলদাস। ভোররাতের দিকে কুমিরা খালে যখন জোয়ারের পানি ঢুকছিল, তখন নৌকাটি বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলের কুমিরা জেটি এলাকায় নোঙর করতে নির্দেশ দেন রুহি জলদাস। জেটিটি উপকূল থেকে সাগরের দিকে ৭০০ মিটার লম্বা। রেইনকোট পরে একাই নৌকা চালিয়ে জেটির মাথায় নিয়ে যান আশু জলদাস। এরপর তিনি আর ঘরে ফেরেননি। তাঁকে ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারের সদস্যরা জেটি এলাকায় গিয়ে দেখতে পান, নৌকাটি নেই। নৌকার মালিককে বিষয়টি জানানোর পর তাঁরা আরেকটি নৌকা নিয়ে আশু জলদাসকে খুঁজতে বের হন। উভয় দিকে আট কিলোমিটার পথ খোঁজ করার পর সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পাক্কা মসজিদ বরাবর সাগরে নৌকাটি নোঙর করা অবস্থায় পাওয়া যায়।