টেবিল পেতে ছাত্রলীগের টাকা তোলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

প্রশাসন ভবনে ব্যানার ঝুলিয়ে টেবিল চেয়ার পেতে টাকা নেন ছাত্রলীগের নেতা– কর্মীরা। গত সোমবার দুপুরে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অষ্টম পর্বের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং (ইন্টার্নশিপ) ভাতা ও জামানতের টাকা থেকে বিদায় অনুষ্ঠানের নামে ছাত্রলীগের টাকা তোলার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ আজ বুধবার একটি কমিটি গঠন করে দেয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

গত সোমবার এই টাকা থেকে ‘বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ২০২৪’–এর নামে টেবিল পেতে ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। টাকা আদায় বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

কমিটিতে রয়েছেন ইনস্টিটিউটের সিভিল বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর মো. রশিদুল আমীন, টেক ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ইনস্ট্রাক্টর এস এম আজম উল্লাহ ও নন–টেক বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর আসফাকুল আসেকিন।

বিদায়ী সাধারণ ছাত্রদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ ওই অনুষ্ঠান করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে টাকা আদায় করেছে। অবশ্য ছাত্রলীগ নিজেরা টাকা আদায় করার কথা স্বীকার করেনি। ছাত্রলীগের দাবি, বিদায়ী শিক্ষার্থীদের আটটি বিভাগের ক্যাপ্টেনরা বড় ভাই হিসেবে তাদের (ছাত্রলীগের) সহযোগিতা চেয়েছেন। তারা শুধু সহযোগিতা করে অনুষ্ঠান করে দেবে।

আরও পড়ুন

প্রমাণ হিসেবে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জীহান সোমবার দাবি করেন, তিনি নিজেও টাকা দিয়ে রসিদ নিয়েছেন। তাঁর রসিদের মুড়ি আদায়কারীদের কাছে আছে। তবে মুড়িতে দেখা যায়, নামের জায়গায় ‘জীহান ভাই’ লেখা আছে। কিন্তু এক পাশে লেখা রয়েছে ‘আনপেইড’।

আর সাধারণ ছাত্রদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, জামানতের টাকা তুলে তাঁরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাঁদের আর বিদায় সংবর্ধনা নিতে আসার সুযোগ নেই। ছাত্রলীগকেও তাঁরা টাকা তোলার দায়িত্ব দেননি। কিন্তু ফটকের সামনে টেবিল পেতে তাঁদের টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। প্রথম দিন সোমবার তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। সোম, মঙ্গলবার ও আজ বুধবার মিলে এক হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এই টাকা তোলার কথা ছিল।

এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরের দুই দিন আর টাকা তোলা হয়নি। কেউ টেবিল পেতেও বসেনি। উল্টো ছাত্রলীগ পত্রিকায় তাদের জড়িয়ে খবর প্রকাশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদায়ী শিক্ষার্থীদের এক-তৃতীয়াংশ টাকা দিয়েছেন। প্রশাসনের উদ্যোগের কারণে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থীদের টাকা দিতে হয়নি। এ অবস্থায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহম্মদ আবদুর রশীদ মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাদের টাকা নেওয়া হয়েছে, ওরা (ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান তারা করে দিতে চায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা টাকা ফেরত চায়। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’