নির্বাচনী পরীক্ষা ছাড়াই ফরম পূরণ

যশোর জেলার মানচিত্র

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ে নির্বাচনী পরীক্ষা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের এইচএসসি এবং এইচএসসি (কারিগরি-বিএমটি) পরীক্ষার ফরম পূরণ চলছে। অথচ নিয়মানুসারে কেবল নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই ফরম পূরণ করতে পারবে।

নির্বাচনী পরীক্ষা না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ রবিউল হাসান। তিনি বলেন, সিলেবাস শেষ হয়নি বলে ১৬৫ জন ছাত্রছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে চায় না বলে আবেদন করে। তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই শিক্ষা বোর্ড ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেয়। সে কারণে আর নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর শিক্ষা বোর্ড গত ২৭ মার্চ ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কেবল নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা আবেদন ফরম পূরণ করতে পারবে।

সিলেবাস শেষ হয়নি বলে ১৬৫ জন ছাত্রছাত্রী নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে চায় না বলে আবেদন করে। তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই শিক্ষা বোর্ড ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেয়। সে কারণে আর নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।
রবিউল হাসান, অধ্যক্ষ

ফরম পূরণের নীতিমালায় বলা হয়, কোনো পরীক্ষার্থী তার নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কোনো কারণ কিংবা শারীরিক অসুস্থতার জন নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে কিংবা নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে অভিভাবকের লিখিত আবেদন ও পরীক্ষার্থীর প্রাক্‌-নির্বাচনী পরীক্ষার সন্তোষজনক ফলাফলের ভিত্তিতে পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারবে। বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণ শেষে ফল প্রকাশের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩১ মার্চ। ফরম পূরণের শেষ দিন ছিল ২৫ এপ্রিল। পরে তা বাড়িয়ে ৫ মে করা হয়।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড গত ২৭ মার্চ ২০২৪ সালের এইচএসসি (বিএমটি) পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কেপায়েত উল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধারাবাহিক নম্বর স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে পাঠাতে হবে এবং হার্ড কপি প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করতে হবে।

নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয় সূত্র জানায়, মহাবিদ্যালয়ে দুটি শাখা—একটি সাধারণ এবং অপরটি কারিগরি (বিএমটি)। সাধারণ শাখায় ৪৩০ জন এবং কারিগরি শাখায় (বিএমটি) ১৫০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করছে।

অধ্যক্ষ রবিউল হাসান বলেন, তাঁরা নির্বাচনী পরীক্ষা না নিলেও মিড টার্ম, অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক এবং প্রাক্‌-নির্বাচনী পরীক্ষা নিয়েছেন। সর্বশেষ তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেসব ছাত্রছাত্রী ফরম পূরণ করেছে, তাদের একটি প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নেওয়া হবে। ২৮ এপ্রিল এই প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নেওয়া হবে।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্ভারে ত্রুটির জন্য পরীক্ষার্থীর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধারাবাহিক নম্বর অনলাইনে পাঠানো যাচ্ছে না। সার্ভার ঠিক হলে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নেওয়ার পর পরীক্ষার্থীর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধারাবাহিক নম্বর অনলাইনে পাঠানো হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের যশোরের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ বলেন, পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা না নিয়ে ফরম পূরণের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে। এই রকম কিছু হয়ে থাকলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আহসান হাবীব বলেন, নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয় নির্বাচনী পরীক্ষা নেয়নি, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কেপায়েত উল্লাহ বলেন, বোর্ডের সার্ভারে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এ জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধারাবাহিক নম্বর অনলাইনে পাঠানো যাচ্ছে না। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার্থীর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধারাবাহিক নম্বর পাঠানোর সুযোগ নেই। নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে পরীক্ষা না নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি খোঁজ নেওয়া হবে।