যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারি, কমিটি স্থগিত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে আজ শনিবার দুপুরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন সাধারণ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে আলাদাভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার রাত আটটার দিকে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হলো। একই সঙ্গে কেন পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার যথোপযুক্ত লিখিত জবাব আগামী সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের মো. সোহেল রানাকে সভাপতি ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের তানভীর ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে শনিবার দুই পক্ষের মারামারি হয়। এসব কারণে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শনিবার আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি মো. আল মামুন ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলমকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অপর শিক্ষার্থীরা হলেন ছাত্রলীগের কর্মী শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নৃপেন্দ্রনাথ রায়, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের আশরাফুল ইসলাম ও জামিল খান।

ছাত্রলীগের কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ও এস এম ইকরামুল কবিরের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মৌলবাদবিরোধী একটি মিছিল শুরু হয়। এতে অংশ নেন শহীদ মসিয়ূর রহমান হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিপ্লব দে, শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ারা আজমিরাসহ অন্যরা। মিছিল শেষে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাবেশ শেষে বেলা পৌনে তিনটার দিকে আল মামুনসহ নেতা-কর্মীরা শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্র হলে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সলের কর্মীরা হল থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ধাওয়া দেন। তাঁরা আল মামুনকে মারধর করেন। মামুনকে মারধর করতে দেখে তাঁদের সমর্থক আশরাফুল আলম তাঁর মুঠোফোন বের করে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। তা দেখে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আশরাফুলকেও মারধর করেন। একপর্যায়ে মামুন ও আশরাফুলকে উদ্ধার করে পুলিশি পাহারায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম ও জামিল খান আহত হন।

শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল মামুন বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে মৌলবাদবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করতে গেলে সোহেল রানা ও তানভীর ফয়সালের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপরে হামলা করে। তাঁরা আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে।’

সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠনের পর সহসভাপতি আল মামুন প্রথম ক্যাম্পাসে আসেন। তিনি বহিরাগত কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হলে প্রবেশের সময় তাঁদের এক কর্মী নৃপেন্দ্রনাথকে মারধর করেন। পরে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। এতে কয়েকজন আহত হয়। তিনি আরও বলেন, কমিটি স্থগিত হওয়ার চিঠি পেয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি।

মারামারির ঘটনায় নৃপেন্দ্রনাথ রায় বলেন, হলের রান্না শেষ না হওয়ায় বাইরে খেতে যাচ্ছিলেন। তখন বিপ্লব দে ও আল মামুন দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন, তাঁকে থামিয়ে তাঁরা বলেন, ‘তুমি তো দূর থেকে এসে খুব রাজনীতি করছ।’ তারপর তিনি (নৃপেন্দ্রনাথ) একটু তর্কাতর্কি করেছেন। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে চড়থাপ্পড় মারেন। তিনি থামাতে গেলে পাশে থাকা ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। তারপর তিনি দৌড়ে হলে গিয়ে বড় ভাইদের ডাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, মারামারির ঘটনায় সহসভাপতি আল মামুন ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা—দুই পক্ষের লোকজনই অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রক্টরের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামীকাল রোববার এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।