আমজনতার হোটেলে মিলছে বিনা মূল্যের খাবার

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আমজনতার হোটেলে খাচ্ছেন লোকজন। গত শুক্রবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

বিভিন্ন বয়সী প্রায় ৫৫ নারী–পুরুষ সারিবদ্ধভাবে বারান্দায় বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। তাঁদের খাবারের তালিকায় ছিল পোলাও, মুরগির মাংস, বুটের ডাল আর সালাদ। খাওয়া শেষে সবার জন্য পানের ব্যবস্থাও ছিল। খাবার খেতে এসেছিলেন সবের আলী (৬৫)। তিনি বলেন, ‘অভাবের সংসারে এখনো কাজ করি। কিন্তু ভালোমন্দ খাবার খেতে পারি না। তাই দাওয়াত পেয়ে আমজনতার হোটেলে খেতে এসেছি।’

গতকাল শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা সদরের তাড়াশ এলাকার এক বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভিলেজ ভিশন’–এর উদ্যোগে এলাকার অসহায়–দুস্থ মানুষকে এক বেলা ভালো খাবার খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়। ২০২১ সাল থেকে প্রতি শুক্রবার সর্বোচ্চ ১০০ জনের জন্য তারা এ আয়োজন করে। উপজেলার ঘরগ্রাম, গুল্টা, ঝুরঝুরিসহ বিভিন্ন গ্রামেও এমন আয়োজন করা হয়।

সদর এলাকার বাচ্চু প্রামাণিক (৭০) বলেন, ‘খুবই খাতির করে তাঁরা আমাদের খাবার খেতে দেন। তাই দাওয়াত পেলেই চলে আসি খাবার খেতে।’ তাড়াশ পূর্বপাড়ার মোরজান বিবি (৬০) বলেন, তিন মেয়ের বিয়ের পর তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে খান। সপ্তাহে এক দিন একটু ভালো খাবারের আশায় তিনি এসেছেন।

স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সুজন এসেছে খাবার খেতে। সে জানায়, তাদের যেখানেই দাওয়াত দেওয়া হয়, সেখানেই তারা যায়।

স্বেচ্ছাসেবী বিলকিস পারভীন স্থানীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে গতকাল যতজনের আসার কথা, ততজন আসতে পারেননি। আরেক স্বেচ্ছাসেবী দশম শ্রেণির ছাত্র ফাহাদ খন্দকার জানায়, ‘দুস্থ মানুষের জন্য কিছু একটা করতে পারছি ভেবে ভালো লাগে।’

সংগঠনের পরিচালক শরিফ খন্দকার বলেন, প্রথমে তাঁরা যে এলাকার মানুষদের খাওয়াবেন, সে এলাকায় খোঁজখবর নেন। তারপর দুস্থ-গরিব পরিবারের বাড়িতে গিয়ে সদস্যদের দাওয়াতের স্থান ও সময় জানিয়ে টোকেন দিয়ে আসেন। নির্ধারিত দিনে ওই টোকেন নিয়ে দাওয়াতিরা হাজির হন।

শরিফ আরও বলেন, ভিলেজ ভিশন নামের সংগঠনটি ২০০৭ সালে পাবনার বেড়া উপজেলার নাটিয়াবাড়ি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে তাড়াশ উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে তাড়াশে ৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। সব বয়সের ও পেশার মানুষ তাঁদের সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী হতে পারেন। আমজনতার হোটেলে খাবারের খরচ বহন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ‘পাশে আছি’ নামের একটি সংগঠন। তাঁদের কাজে সহযোগিতা করতেন প্রয়াত সংসদ সদস্য ম ম আমজাদ হোসেন। বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আবদুল আজিজ, ইউএনও মো. মেজবাউল করিম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামানও তাঁদের সহায়তা করেছেন।