রাজশাহীতে যুবলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
রাজশাহীতে আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজশাহীর একটি সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এই অভিযোগে এক যুবলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে ওই শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
যুবলীগ কর্মীর নাম হিটলার মাহমুদ (৩৬)। বাগমারা উপজেলার হাসনিপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। হিটলারের বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতা। এত দিন হিটলারের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেননি ওই শিক্ষার্থী। আওয়ামী সরকারের পতনের পর গত ২৮ নভেম্বর তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ কর্মী হিটলার মাহমুদ বলেন, ‘সব মিথ্যা অভিযোগ। শুধু অভিযোগ করলেই তো হবে না, প্রমাণ করতে হবে। এর আগে আমাদের নামে ১০৭ ধারায় মামলা করেছিল। আদালতে প্রমাণ করতে পারেনি। এবার আবার মামলা করেছে। আদালতে প্রমাণ হবে। আমিও সংবাদ সম্মেলনে এসব বানোয়াট অভিযোগের জবাব দেব।’
ওই শিক্ষার্থীর দাবি, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) প্রভাবের কারণে তিনি আগে বিচার পাননি। হিটলার যুবলীগ কর্মী হলেও তাঁর মামা ও চাচা বিএনপির নেতা। এখন মামলা করলেও তিনি সুবিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন। তাঁরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এর আগে হিটলার তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর বাগমারার ভবানীগঞ্জ তক্তপাড়ায় তাঁর এক বোনের বাসায় ও রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর ঝাউতলা মোড়ের এক বাসায় নিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক মেলামেশা করেন। কিন্তু বিয়ের জন্য চাপ দিলে তিনি প্রতিবারই এড়িয়ে যেতেন।
এর আগে ওই ছাত্রী বিয়ের দাবিতে একবার হিটলারের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। তখন তাঁর বাবা বলেন, কিছুদিনের মধ্যে তাঁকে বিয়ে করিয়ে বাড়িতে আনা হবে। এভাবে বিয়ে করালে তাঁদের সম্মান ক্ষুণ্ন হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়নি।
ওই ছাত্রী বলেন, প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি হিটলারকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন। তখন হিটলার তাঁকে গোপনে ধারণ করা কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পাঠান। তাঁর কথামতো না চললে এগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। ফলে তিনি সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ওই ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে হিটলার দিনের পর দিন ধর্ষণ করেন বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি বলেন, হিটলারের বিরুদ্ধে মামলা করতে তিনি ২০ নভেম্বর বাগমারা থানায় যান। সেদিন ওসি তৌহিদুল ইসলাম শুধু একটি অভিযোগ নিয়ে রাখেন। এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তিনি মামলা রেকর্ড করেননি। পরে ২৮ নভেম্বর তিনি আদালতে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার আবেদন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন।
ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘মামলা করার পরপর আমি জেনেছি, হিটলার ইতিমধ্যে তিনটি বিয়ে করেছেন।’
ওই কলেজছাত্রীর আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, হুমকি দেওয়ার মামলায় আসামি হিটলার মাহমুদসহ অন্য আসামিরা আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তাঁরা বন্ড দিয়ে জামিন পেয়েছেন। আর ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের মামলার আবেদনের পর আদালত পিবিআইকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত।