বরিশালে জিপিএ-৫ সংবর্ধনা: কীর্তনখোলার তীরে কৃতী শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস
শরতের সকালে আকাশ গাঢ় নীল। রোদের ঝাঁজে ভ্যাপসা গরম। এর মধ্যেই সকাল আটটা থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কলরবে মুখর হয়ে উঠতে থাকে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে মেতে ওঠে খোশগল্পে, কেউ আবার সেলফি তোলায় ব্যস্ত। সবারই চোখেমুখে ছিল সাফল্যের আনন্দ, স্বপ্নের উচ্ছ্বাস। তাদের জড়ো হওয়ার উপলক্ষ ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ‘জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কৃতী সংবর্ধনা ২০২৫’ অনুষ্ঠান।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’—স্লোগানে প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় বরিশালে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় নগরের কীর্তনখোলা নদীতীরের বান্দরোডে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শুরু হয় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের এ মিলনমেলা।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতকে সম্মান জানান। এরপর ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা ভিড় জমাতে থাকে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে। প্রবেশপথে নিবন্ধন বুথ থেকে কার্ড, নাশতা ও ক্রেস্ট নিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এবার অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ১ হাজার ৮৩ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছিল।
বন্ধুসভার সভাপতি নাঈম ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন। অনুষ্ঠানে মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে ‘না’ বলার অঙ্গীকার করান প্রথম আলোর হেড অব কালচারাল প্রোগ্রাম গীতিকার কবির বকুল। এ সময় তিনি বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে হবে তোমাদের। এ জন্য নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা বাংলাদেশের জয় চাই, তোমাদের সেই জয়ের পথকে সুগম করার জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে।’
অতিথিদের মধ্যে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন বরিশালের প্রবীণ নারী নেতা অধ্যাপক শাহ সাজেদা, ঝালকাঠি সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ লিয়াকত হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগদীশ সারস্বত মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আসাদুল আলম, বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ।
কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘ভালো ফলাফল করেছ, জীবনের প্রথম ধাপের পরীক্ষায় তোমরা সফল হয়েছ। এটা তোমাদের চূড়ান্ত সফলতা নয়। চূড়ান্ত সফলতা সেদিনই আসবে, যেদিন তোমরা এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা সামনে অক্ষুণ্ন রেখে পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারবে। সফলতা মানেই সার্থকতা নয়। সফলতা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সার্থকতা তার চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন। তোমাদের নিজের একার সফলতার চিন্তাকে বাদ দিয়ে যখন অনেককে নিয়ে সফল হতে পারবে, তখনই আসে সার্থকতা। এ জন্য শুধু বই পড়লে হবে না, মানুষের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে হবে। মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হতে পারো, সেই চেষ্টা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তব্যে সাবেক অধ্যক্ষ আসাদুল আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা একেকজন একেকটি অনুপ্রেরণার গল্প। সেই গল্পগুলো প্রথম আলো আজ একই সুতায় গেঁথে আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে। এখানে আমরা এক আকাশ তারকারাজির সামনে কথা বলছি, যাদের জীবনের সেরা অর্জন, তারা শ্রমে-ঘামের বিনিময়ে অর্জন করেছে। তোমাদের অভিনন্দন, হে বিজয়ী।’
এর আগে সকালে উৎসব প্রাঙ্গণে ঢুকতেই শিক্ষার্থীদের আড্ডা ও কোলাহল চোখে পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিল জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী হাফিজুল হক চৌধুরী। সে বলে, ‘সকাল ৯টায় এসেছি। পরীক্ষার পর থেকে এত খুশি আর হইনি। আমার সব মেধাবী বন্ধু এখানে এসেছে। পুরোনো বন্ধুদের পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে চলে গান, নৃত্য। জিপিএ-৫ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের থিম সংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী মিজানুর রহমান ও তাঁর দল। ‘আমরা করব জয়’ অনুপ্রেরণামূলক গান পরিবেশন করে বন্ধুসভার বন্ধু নাঈম, রাকিব ও ঋদ্ধ। এ সময় মিলনায়তনে সবাই এই গানের সুরে সুর মেলান।
নাচ-গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে অনলাইনে কুইজ প্রতিযোগিতা। কুইজে অংশ নেওয়া ১০ জন শিক্ষার্থীকে মঞ্চে ডেকে পুরস্কার তুলে দেন অতিথি গীতিকার কবির বকুল। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে গান গেয়ে মঞ্চ মাতান ব্যান্ড সংগীতশিল্পী মিথুন দে।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় আছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।