জরাজীর্ণ ডাকঘর, ঝুঁকি নিয়ে চলছে কার্যক্রম 

ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে আছে। ভেতরে গুমোট ও  স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া।

জরাজীর্ণ ভবনটি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা ডাকঘর। সংস্কারের অভাবে ভেতরে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বুধবার সকালেছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ডাকঘর স্যাঁতসেঁতে ও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। এ অবস্থায় ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঝুঁকি নিয়ে দাপ্তরিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন।

পোস্টাল অপারেটর মো. মশিউর রহমান বলেন, ডাকঘর ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থার কথা ওপর মহলের প্রায় সবার জানা। কয়েকবার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও তদন্ত দল এসে পরিদর্শন করে গেছে। তবে কবে কাজ হবে, সেটি কেউ জানে না। তাঁরা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেন। মাঝেমধ্যে ছাদের পলেস্তারা খসে গায়ে পড়ে। ভয় লাগে কিন্তু করার কিছুই থাকে না।

আমি দুই পোস্ট অফিসে দায়িত্ব পালন করি। এই অফিসে ঢুকতে গেলেই ভয় লাগে। ভয়ে কখনো ছাদের দিকে তাকাই না।
মো. সেকেন্দার আলী, পোস্টম্যান 

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কলেজপাড়ায় অবস্থিত ডাকঘর ভবনটির বাইরে দেয়াল ঘেঁষে আবর্জনার স্তূপ। ভেতরে রংচটা ভবনের গায়ে লেখা ‘চিলমারী উপজেলা ডাকঘর’। গেটের বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না এটা একটা সরকারি কার্যালয়। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সেবা দিচ্ছেন। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে আছে। ভেতরে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া।

পোস্টম্যান মো. সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আমি জোরগাছ পোস্ট অফিস ও চিলমারী উপজেলা পোস্ট অফিস দুই জায়গায় দায়িত্ব পালন করি। এই অফিসে ঢুকতে গেলেই ভয় লাগে। ভয়ে কখনো ছাদের দিকে তাকাই না।’

উপজেলার রমনা ইউনিয়নের পানাতিপাড়া গ্রাম থেকে স্ট্যাম্প কিনতে আসা যুবক মো. মিজানুর রহমান জানান, চাকরির আবেদনের খামে স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হয়। এ জন্য প্রায় সময় এই ডাকঘরে যাওয়া-আসা করেন। কিন্তু এই জরাজীর্ণ ভবনের ছাদের দিকে তাকালে ‘বুকের ভেতর ছ্যাঁৎ করে ওঠে’। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ভেতরের রড বের হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন রং না করায় ভবনটি দেখতে ভূতের বাড়ির মতো মনে হয়।

ডাকঘর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮১ সালে ২১ শতক জায়গার ওপর নির্মিত এই উপডাকঘর কার্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। তবে ১৫ বছর ধরে এ ভবনে কোনো কাজ হয়নি।

উপজেলা পোস্টমাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সরকারি চিঠিপত্র, বিভিন্ন চাকরির প্রবেশপত্র ও পার্সেল ডাকঘরে মাঝেমধ্যে আসে। বেসরকারি ও ব্যক্তিগত চিঠিও মাঝেমধ্যে আসে। তবে সংখ্যায় খুব কম। এ ছাড়া কিছু গ্রাহক মাসে মাসে ‘ডাক জীবনবীমা’র টাকা জমা রাখেন। পুরো ভবনটি স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। ভবনের ছাদসহ বিভিন্ন জায়গার পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিভিন্ন সময় ডাক বিভাগের লোকজন এসে ভবনটি পরিদর্শন করে গেলেও সংস্কার হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই দাপ্তরিক কাজকর্ম করতে হচ্ছে।

রংপুর বিভাগীয় ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রদীপ কুমার জানান, ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে ডাক অধিদপ্তর করে। ইতিমধ্যে তাঁরা ডাকঘরের বিষয়টি ডাক বিভাগকে জানিয়েছেন।