৬১টি গাছ রক্ষা করেই ওয়াকওয়ে

ওয়াকওয়ের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষে এটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে এমন নান্দনিক ওয়াকওয়ে। সম্প্রতি নগরের তারাপুর চা-বাগান এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের সাগরদিঘিরপাড় এলাকার পাশ ঘেঁষে চলে গেছে মালনীছড়া (প্রাকৃতিক খাল)। সে ছড়ার সাগরদিঘিরপাড় অংশের দুই পাড়ে সিটি করপোরেশন তৈরি করছে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ)। এরই মধ্যে এই ওয়াকওয়ের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষে এটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

দুটি ধাপে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশ থেকে মণিপুরি সম্প্রদায়ের শ্মশান পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট দীর্ঘ ওয়াকওয়ে হচ্ছে। এই অংশে পড়েছে ২৩টি গাছ, এর মধ্যে ৩টি পড়েছে ওয়াকওয়ের মধ্যে। সেগুলো অক্ষত রাখা হয়েছে। আর বাকি গাছ রক্ষায় ওয়াকওয়ে কিছুটা বাঁকানো হয়েছে। একইভাবে দ্বিতীয় ধাপে ওয়াকওয়ে নির্মাণে ৩৮টি গাছ অক্ষত রাখা হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। গাছগুলো বাঁচিয়ে রাখায় ওয়াকওয়ের অনেকটা অংশ বৃক্ষছায়ার মধ্যে পড়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ছড়ার দুই তীর সংরক্ষণ করে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি বসার বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া আলোকসজ্জার পাশাপাশি নতুনভাবে গাছ রোপণ করে স্থানটি সবুজায়ন করা হবে। ২টি স্টিলের সেতু, গ্যালারিসহ ১টি মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করা হবে। নির্মিতব্য মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের ছোট সভা ও অনুষ্ঠান করা যাবে।

নির্মাণ তদারকিতে থাকা সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী অংশুমান ভট্টাচার্য জানান, শুরুতে পুরোনো গাছগুলো কেটে ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছিল। পরে অবশ্য প্রকৃতি রক্ষার জন্য সে পরিকল্পনা থেকে সরে এসে গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখে নকশা করা হয়। কারণ, গাছ কাটা হলে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি ওয়াকওয়েতে কোনো ছায়াও থাকত না। তাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্থপতি শুভজিৎ চৌধুরী গাছগুলো বাঁচিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের নকশা তৈরি করে দেন। এই নকশাতেই এখন তৈরি হচ্ছে ওয়াকওয়ে। এতে রেইনন্ট্রি, কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির সর্বমোট ৬১টি গাছ রক্ষা পেয়েছে।

অংশুমান ভট্টাচার্য আরও জানান, প্রথম ধাপের কাজ গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছিল। তা এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ছড়ার বাকি অংশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজও গত জুলাই মাসে শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও মালনীছড়ার পাড়ে থাকা ৩৮টি গাছ বাঁচিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘শুরুতে এ প্রকল্পের যে নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল, এতে নানা প্রজাতির অসংখ্য গাছ কাটা পড়ত। এটি যখন নজরে পড়ে, তখন গাছগুলো বাঁচিয়ে নতুনভাবে নকশা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিই। এখন গাছগুলো বাঁচিয়ে রেখেই ওয়াকওয়ে নির্মিত হচ্ছে।’