হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখলেন শিক্ষার্থীরা

দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের মূল গেটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দাবিতে প্রশাসন ভবনের মূল গেটে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ভবনের ভেতরে আটকে পড়েন উপাচার্য, প্রক্টরসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যরা।

প্রায় চার ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে ভবনের তালা খুলে দেন শিক্ষার্থীরা।

সেশনজট, ক্রেডিট ফি কমানো, সব আবাসিক হলে ডাইনিং চালু করা, একাডেমিক কাউন্সিলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি রাখাসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভবনের গেটে তালা দিয়ে বাইরে জটলা হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীও উপস্থিত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবনের বাইরে বেরিয়ে যেতে অনুরোধ করলে তাঁরা নিজ নিজ ডেস্ক ছেড়ে বাইরে আসেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইমরান হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন সময় সেশনজট কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। ডাইনিংয়ে কোনো ভর্তুকি নেই। দুটি হলে ডাইনিং চলত, কিছুটা সাশ্রয়ে খেতে পারতাম, সেটাও এখন বন্ধ। বর্তমান উপাচার্য আসার পর আমরা স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু কোনো কর্ণপাত করেননি তিনি। আজ সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।’

হঠাৎ কেন শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন করছে, আমরা জানতাম না। পরে তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তাদের কিছু দাবিদাওয়া ছিল, সেসব বিষয়ে কথা হয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা হবে।
মামুনুর রশিদ, প্রক্টর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে ছাত্রলীগের কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী আছেন। আজ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে কর্মকর্তা (চিকিৎসক) নিয়োগের সর্বশেষ পরীক্ষা। এর আগে কয়েক দফায় কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে রিজেন্ট বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা বলছেন, প্রশাসন গত তিন বছর থেকে অনেকটা একনায়কতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে। অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের কোনো মূল্যায়ন করছে না। তবে নিয়োগ পাওয়া থেকে ছাত্রলীগ যেন বঞ্চিত না হয়, সে জন্য কৌশলে এ আন্দোলন নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে কিছু যৌক্তিক দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে আজকে তাঁদের আন্দোলনের বিষয়ে অবগত ছিলাম না। বিষয়টি পরে জেনেছি। প্রশাসন কিছু দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভবনের তালা খুলে দিয়েছেন।’ চলতি নিয়োগে ছাত্রলীগ থেকে আবেদনকারী প্রার্থীরা যেন সুযোগ পান, এ জন্য প্রশাসনকে চাপ দিতে এমন আন্দোলন কি না, এমন প্রশ্নে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, বিষয়টি সঠিক নয়, তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়, এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে ছাত্রলীগ সেটি মেনে নিবে না।

ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা আছে। কৃষি অনুষদ বাদে প্রায় সব অনুষদে শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংকট রয়েছে। এমনও বিভাগ আছে, যেটি মাত্র পাঁচজন শিক্ষক নিয়ে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। অথচ ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখনো ক্যাম্পাসে রয়ে গেছেন। প্রায় প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক বা দুই বছরের সেশনজটে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মামুনুর রশিদ মুঠোফোনে বলেন, ‘হঠাৎ কেন শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন করছে, আমরা জানতাম না। পরে তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তাদের কিছু দাবিদাওয়া ছিল, সেসব বিষয়ে কথা হয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা হবে।’ কাউন্সিলে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।

২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭৪ জন শিক্ষক, ২২ জন কর্মকর্তা ও ৫১ জন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০২২ সালে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি পদ কমিয়ে পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ঘোষিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর থেকে বিভিন্ন ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ ছিল সর্বশেষ নিয়োগ পরীক্ষা।