কোটি টাকার ভবন নির্মাণে ত্রুটি, তদন্ত কমিটি গঠন

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় মঙ্গলসিদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের মেঝেতে ঢালাই উঠে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারের শ্রমিকেরা তা সংস্কার করছেন। গত বৃহস্পতিবার।ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজে নানা ত্রুটির অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা। ভবনগুলোর একেকটির নির্মাণে ব্যয় কোটি টাকার ওপরে। ওই বিদ্যালয়গুলোর নির্মাণকাজের ত্রুটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

এলজিইডি ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি ও চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রকল্পের আওতায় নড়িয়া উপজেলার ৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতল ও তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এলজিইডি ভবনগুলোর নির্মাণকাজ করছে। ওই ৩৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, ১৪টির নির্মাণকাজ চলমান ও ৫টির কার্যাদেশ দেওয়া হলেও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।

স্কুলের ভবন নির্মাণে নানা অসংগতির কথা বলে শিক্ষকেরা চিঠি দিয়েছেন। তা আমরা তদন্ত করেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলজিইডিকে অনুরোধ করেছি।
নুরুল হাসান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, শরীয়তপুর

সম্প্রতি ফতেজঙ্গপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রোকন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মালতকান্দি আন্ধারমানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর সিরঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঙ্গলসিদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তেলিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা ভবনগুলোর নির্মাণে ত্রুটির কথা জানিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। নড়িয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইকবাল মনসুর বিষয়টি জানিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেন। ওই চিঠি পাওয়ার পর এলজিইডির শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। এরপর গত মঙ্গলবার এলজিইডির শরীয়তপুর কার্যালয় থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্মাণ করা স্কুল ভবনগুলোতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও দেয়াল, বিম ও মেঝেতে ছোট ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। দরজা ও জানালায় নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। ছাদ থেকে পানি পড়ছে।

এ ব্যাপারে এলজিইডির নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী সাহাবুদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণকাজের যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছে, তা ঠিকাদারেরা সংস্কার করে দিচ্ছেন। আর অধিকাংশ স্কুলের কাজ এখনো চলমান। তা বুঝে নেওয়ার সময় কাজের মান বিচার করা হবে।

নড়িয়ার মঙ্গলসিদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি তৃতীয় তলা পর্যন্ত করা হয়েছে। ১ কোটি ২৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ওই ভবনটি গত জুনে ঠিকাদার মোক্তার হোসেন এলজিইডিকে বুঝিয়ে দেন। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ তা ব্যবহার শুরু করে। ওই ভবনটির ছাদ থেকে পানি পড়া, মেঝের ঢালাই ও পলেস্তারা ওঠে যাওয়ার অভিযোগ করে প্রধান শিক্ষক শাহিদা বেগম শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটি ব্যবহার শুরু করার পরই ছাদ থেকে পানি পড়তে থাকে। কক্ষের মেঝের ঢালাই ও পলেস্তারা ওঠে যায়। ঠিকাদারকে জানালে তিনি চুপ থাকার জন্য হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলার বারান্দা ও সবগুলো কক্ষের মেঝের ঢালাই তুলে ফেলা হয়েছে। ঠিকাদারের শ্রমিকেরা নতুন করে সংস্কারকাজ করছেন।

জানতে চাইলে ঠিকাদার মোক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢালাইয়ের পরে বেশি পানি দেওয়া হয়নি। যার কারণে সিমেন্ট-বালু কম জমাট বেঁধেছে। তাই মেঝেতে ফাটল দেখা দিয়েছে। আর ছাদে গাছের পাতা ও আবর্জনা জমে থাকায় দেয়াল বেয়ে পানি পড়েছে। আমরা তা সংস্কার করে দিচ্ছি।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুলের ভবন নির্মাণে নানা অসংগতির কথা বলে শিক্ষকেরা চিঠি দিয়েছেন। তা আমরা তদন্ত করেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলজিইডিকে অনুরোধ করেছি।’

এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নড়িয়ায় কয়েকটি স্কুলের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে আমাদের প্রকৌশলীরা তদারক করছেন। তার মধ্যেও কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে, কী ধরনের সমস্যা হয়েছে। পরে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’