রেলমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে প্রার্থীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ, ইসির সতর্কতা

রাজবাড়ী জেলার মানচিত্র

রাজবাড়ী-২ (পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী) আসনের সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমের ছেলে আশিক মাহমুদ ওরফে মিতুল হাকিমের বিরুদ্ধে পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফরিদ হাসান ওদুদ ও তাঁর সমর্থকদের হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থী নিজে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর গত রোববার একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় মন্ত্রীর ছেলেকে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আশিক মাহমুদ (মিতুল) জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর বাবা জিল্লুল হাকিম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আশিক মাহমুদ পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়োর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। খন্দকার সাইফুল মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে প্রার্থী ফরিদ হাসান ২০১৪ সাল থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর ভাই ওয়াজেদ আলী পাংশা পৌরসভার মেয়র।

লিখিত অভিযোগে ফরিদ হাসান উল্লেখ করেন, ৮ মে অনুষ্ঠেয় পাংশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর (ফরিদ) জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রেলমন্ত্রীর ছেলে আশিক মাহমুদ বিভিন্ন জনসভায় প্রকাশ্যে তাঁকে ও তাঁর সমর্থকদের হত্যা ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ২৫ এপ্রিল যশাই হাইস্কুল মাঠ ও পাংশা জর্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এবং ২৬ এপ্রিল হাবাসপুর ইউনিয়ন, আয়না একাডেমি মাঠে প্রকাশ্য জনসভায় তিনি হত্যার হুমকি দেন। এতে তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক প্রচারণা চালাতেও ভয় পাচ্ছেন। এতে যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। মন্ত্রীর ছেলের সন্ত্রাসী, অনৈতিক কার্যক্রম এবং মন্ত্রীর নাম ও ক্ষমতা ব্যবহার করে অপব্যবহার বন্ধ করতে সিইসির হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. অলিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এতে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ২০১৬-এর ১৮ বিধি সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমরা তাঁকে (আশিক) লিখিতভাবে সতর্ক করেছি। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের বক্তব্য না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’

তবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আশিক মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমি সব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু আমার বক্তব্য কাটছাঁট করে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি শুধু ওনার (ফরিদ) বিভিন্ন অত্যাচার, অনাচার তুলে কিছু কথা বলেছি। পুরো বক্তব্য শুনলে ব্যাপারটি বোঝা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, তিনি সব সময় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে। তিনি কমিশন থেকে একটি সতর্কবার্তা পেয়েছেন। এখন থেকে সতর্ক হয়ে বক্তব্য দেবেন।

নির্বাচনী জনসভায় আশিক মাহমুদের বক্তব্য দেওয়ার একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে আশিক মাহমুদকে বলতে শোনা যায়, ‘...যুবসমাজের আল্লাদ পেয়ে সে উপজেলা চেয়ারম্যান হইছিল। সেই যুবসমাজ এখন তাঁর (ফরিদ) বিরুদ্ধে। কোন বুদ্ধিতে তার খায়েশ হইল, সে জিতে যাবে? খেলা কি আমরা জানি না? আমরা কি জানি না, ভেতরে-ভেতরে কারা তার ইলেকশন করতে পারে। ভদ্রলোকের মতো এখনো আছি। থাকতেও চাই শেষ পর্যন্ত।’

ভিডিওতে আশিক মাহমুদ আরও বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল কয়েক দিন ঢাকায় থেকে আবার ফেরত আসব। ওরা কেমনে কেমনে যেন শুনছে। এখন ছড়ায়ে বেড়াচ্ছে, মন্ত্রীর ছেলে এখন মাঠে থাকতে পারবে না। আমরা ওপরে যোগাযোগ করছি, ২৭ তারিখে তাকে তুলে নিয়ে যাইতেছে। এ কথা শুনে মনে করলাম, আমি ৩০ তারিখ পর্যন্ত থাকব। আমার ৫ তারিখে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা, প্লেনের টিকিট কাটা হয়ে গেছে, হোটেল বুকিং দেওয়া হয়ে গেছে। আমার মিটিং আছে। আমি মিটিং পিছিয়ে দিয়েছি। আমি ৯ তারিখে যাব। আমি ৮ তারিখে ইলেকশন পর্যন্ত থাইক্যে ৯ তারিখ যাব। আপনাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা আপনাদের পাশে আছি। যদি ১৯ থেকে ২০ হয়, একটা আওয়াজ দেবেন, দাঁতভাঙা জবাব হবে।’