জোয়ারে প্রতিদিন দুবার প্লাবিত হয় গ্রামগুলো

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের। রোববার বরগুনার তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পূর্ণিমার প্রভাবে উচ্চ জোয়ারে বরগুনার তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশ পায়রা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ১২ জুলাই বাঁধ ভেঙে উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এখন প্রতিদিন দুবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামগুলো। আবার ভাটার সময় পানি নেমে যাচ্ছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। সেখানে খাওয়ার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় প্রায় ১৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছর ভাঙা বাঁধ সংস্কার করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে আবারও ভেঙে যায়। নিম্নমানের কাজের কারণে বারবার বাঁধ ভেঙে যায় বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

পাউবোর বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে বর্তমানে ঝুঁকিতে আছে প্রায় ২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬.৬৮৬ কিলোমিটার, আমতলীতে ৪.৪৩০ কিলোমিটার, তালতলীতে ৭৫০ মিটার, পাথরঘাটায় ৫.৬৬৫ কিলোমিটার, বামনা উপজেলায় ৭.২৪৭ কিলোমিটার ও বেতাগী উপজেলায় ৮৫০ মিটার। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় সিডর, ইয়াস, প্রবল বৃষ্টি ও উচ্চ জোয়ারে প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে তেঁতুলবাড়িয়াসহ আটটি গ্রাম। বাঁধের ভাঙা জায়গা দিয়ে ওই এলাকায় পানি ঢুকছে। তলিয়ে যাওয়া গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে।

শাহিনুর বেগম নামের ওই এলাকার এক গৃহবধূ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দু-এক কেজি করে চাল দিয়ে সাহায্য করার কোনো দরকার নেই। দুই কেজি চাল দিয়ে আমাদের কী হবে? আমরা যদি বাড়িতে থাকতে না পারি, তাহলে লাভ কী? আমাদের কোনো জমিজমা নেই। যেটুকু ছিল, সেটাও ভেঙে গেছে। এখন দ্রুত বাঁধ ঠিক না করলে বাঁচব না। প্রতিবছর ঝড়-বন্যায় যখন বাঁধ ভাঙে, তখন সবার টনক নড়ে। এরপর আর খবর থাকে না।’

রাহাত নামের এক বাসিন্দা বলেন, ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বাড়িতে রান্না করার মতো কোনো উপায় নেই। তাঁদের খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।

বাড়িতে জোয়ারের পানি ওঠায় উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন এক নারী। রোববার তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জয়ালভাঙা গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত বলেন, জয়ালভাঙা থেকে তেঁতুলবাড়িয়া পর্যন্ত বাঁধের অবস্থা নাজুক। তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বাঁধ এক সপ্তাহ আগে নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন সেখান দিয়ে প্রতিদিন জোয়ারে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকছে। সাত দিন হয়ে গেলেও এখনো বাঁধ মেরামত শুরু হয়নি।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরগুনা সদর উপজেলার দলনেতা জাকির হোসেন বলেন, যখন কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেত দেওয়া হয় বা উচ্চ জোয়ার হয়, তখন সবার টনক নড়ে। নদ–নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ১৫ থেকে ১৮ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। জলবায়ুর প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলেও বাঁধের উচ্চতা কম থাকায় উচ্চ জোয়ারে বাঁধ তলিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। উপকূলের বাসিন্দাদের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধের উচ্চতা বাড়ানো দরকার।

পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে বরগুনার তিনটি নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বাঁধের কিছু অংশ ঢেউয়ের তোড়ে পায়রা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের প্রভাব কমলে ওই জায়গায় মেরামত শুরু করা হবে।