ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা যেভাবে পানির ওপরে তোলা হলো
৯টি যানবাহন নিয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা সাত দিন পর নদীর তলদেশ থেকে ওপরে তোলা হয়েছে। গত বুধবার ডুবে যাওয়ার পর টানা সাত দিন নানাভাবে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার পর গতকাল মঙ্গলবার ফেরিটিকে নদীর তলদেশ থেকে তুলে পানির ওপর দৃশ্যমান করা হয়। ফেরি উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা ও ডুবুরি দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডুবে যাওয়ার পর ফেরিটি উল্টে যায়। তীব্র স্রোতের কারণে নদীর তলদেশে পলিমাটি জমে ফেরিটি আটকে যায়। এতে ২৪০ টন ভরের ফেরিটির ভর ৩০০ টন ছাড়িয়ে যায়। ফলে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম দিয়ে ফেরিটিকে ওঠানো সম্ভব হয়নি। কারণ, এ দুটি উদ্ধারকারী জাহাজের ৮০ থেকে ৯০ টন ভরের বস্তুকে ওঠানোর সক্ষমতা আছে। পরে গত শুক্রবার দুপুরে বিআইডব্লিউটির সবচেয়ে শক্তিশালী উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়কে দুর্ঘটনাস্থলে আনা হয়। তবে এর সক্ষমতা ২৫০ টন হওয়ায় ফেরিটিকে উদ্ধারে এই শক্তিশালী জাহাজটিও ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল যৌথভাবে এই অভিযানে অংশ নেয়। এর পর ডুবে থাকা ফেরি ভেতরে এয়ার লিফটিং ব্যাগ স্থাপন করে ফেরিটিকে হালকা করে নদীর তলদেশে থেকে ওপরে ওঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ফেরির তলায় ফাটলের সৃষ্টি হওয়ায় তখন এই পদ্ধতি সফল হয়নি।
এ দিকে নদীতে প্রচণ্ড স্রোত ও শীতের কারণে উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হয়। নদীর তলদেশ দেখতে না পাওয়ায় ডুবে থাকা ফেরিতে এয়ার লিফটিং ব্যাগ স্থাপনে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এতে উদ্ধার কার্যক্রমে সময় বেশি লাগে। পরবর্তীতে গত রোববার বিকেলে উদ্ধারকাজে যুক্ত হতে নারায়ণগঞ্জ থেকে অনুসন্ধানী জাহাজ ঝিনাই-১ ঘটনাস্থলে আনা হয়। পরের দিন এ জাহাজ দিয়ে নদীর তলদেশে ফেরিটির সঠিক অবস্থান নির্ণয় সহজ হয়। এরপর ডুবুরিরা ফেরিতে এয়ার লিফটিং ব্যাগ স্থাপন করে পাম্প যন্ত্রের মাধ্যমে বাতাস দিতে থাকেন। এ উদ্ধার অভিযানে নৌবাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী দল অংশ নেয়। একপর্যায়ে গত সোমবার বিকেলে ফেরিটি এক পাশ কিছুটা হালকা হয়।
নৌবাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের ভাষ্য, উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের ওয়্যার রোপ (মোটা তার) দিয়ে ফেরিটির একপাশে বাঁধা (হুক দিয়ে আটকানো) হয়। তারপর প্রত্যয়ের ক্রেন দিয়ে ফেরিটির একপাশ ধীরে ধীরে ওঠানোর চেষ্টা করা হয়। নদীর তলদেশ থেকে ফেরিটির একপাশ সামান্য উঁচু করে রাখা হয়। এরপর পাম্পিংয়ের মাধ্যমে ফেরির ভেতরে থাকা পলিমাটি অপসারণের কাজ শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ফেরিটিকে এ অবস্থানে রেখে অধিকাংশ পলিমাটি অপসারণ করা হয়। এতে ফেরিটি হালকা হতে থাকে। পরে ফেরিটির দুই পাশে ওয়্যার রোপ স্থাপন করেন উদ্ধারকারী ডুবুরি দলের সদস্যরা। এর পর গতকাল বিকেলে ফেরিটি প্রত্যয় দিয়ে টেনে নদীর তলদেশ থেকে টেনে ওপরে তোলা হয়। ফেরিটির তলার একাংশ এখন দৃশ্যমান অবস্থায় আছে।
আজ বুধবার সকালে ফেরি রজনীগন্ধা উদ্ধারে নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট শাহ পরান প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে প্রচণ্ড স্রোত, কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে উদ্ধার অভিযান কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়। বিভিন্ন উদ্ধার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে ফেরিটিকে নদীর তলদেশ থেকে ওপরে ওঠানো সম্ভব হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্ত থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিটিতে ৯টি মালবাহী যানবাহন ছিল। রাত দেড়টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে আটকা পড়ে ফেরিটি। পরের দিন বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ফেরিটি ডুবে যায়।