বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় বাল্যবিবাহ রোধে বিয়ে নিবন্ধকদের (কাজি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার। বৈঠকে ‘বাল্যবিবাহ পড়ালে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে তাঁদের কোনো আপত্তি থাকবে না’—এ মর্মে কাজিদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা আদায় করা হয়।

জেলা রেজিস্ট্রার আবদুর রব জানান, গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ‘বন্ধ করার পরও গোপনে হয়েছে ৭৪% বাল্যবিবাহ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তিনি এ প্রতিবেদন দেখে ওই দিনই তালা উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ১১ জন কাজিকে তাঁর কার্যালয়ে ডাকেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন বৈঠকে হাজির হন। অনুপস্থিত পাঁচজন কাজিকে আগামী রোববার অফিস সময়ের মধ্যে অঙ্গীকারনামা জমা দেওয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

তালা উপজেলা কাজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও খলিশখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কাজি মিজানুর রহমান জানান, নগরঘাটা ইউপির সিরাজুল ইসলাম, কুমিরার আবুল হোসেন, তালা সদরের নেছার উদ্দিন, ইসলামকাটির মিজানুর রহমান ও খলিলনগরের বাহারুল ইসলাম সরদার গতকাল জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে হাজির হন। সেখানে তাঁরা লিখিত অঙ্গীকার করে আসেন। তবে তাঁরা বাল্যবিবাহ পড়ান না। অধিকাংশ বাল্যবিবাহ হচ্ছে অ্যাফিডেফিটের মাধ্যমে।

জেলা রেজিস্ট্রার বলেন, গত দুই বছরে তালা উপজেলায় যেসব বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়েছে, তার তালিকা সংগ্রহ করে কাজিদের নিবন্ধন খাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখবেন। যদি কেউ বয়স গোপন করে বাল্যবিবাহ দিয়ে থাকেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তালা উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুল নাহার জানান, বাল্যবিবাহ তো কোনো না কোনো কাজি পড়ান। তবে অধিকাংশ সময় মেয়ে কিংবা ছেলের অভিভাবকেরা অন্য জেলা কিংবা উপজেলায় গিয়ে গোপনে বিয়ে দেন। বাল্যবিবাহ পড়ালে কাজিরা তাঁদের সরকারি নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করেন না। তাঁরা অন্য খাতায় তা লিখে রাখেন। মেয়ের বয়স ১৮ ও ছেলের বয়স ২১ বছর হওয়ার পর মূল নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করেন।

আরও পড়ুন

বন্ধ করার পরও গোপনে হয়েছে ৭৪% বাল্যবিবাহ

নাজমুল নাহার আরও বলেন, অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ পড়ানোর অভিযোগে গত ২৫ আগস্ট তালার জালালপুর ইউনিয়নের কাজি আবদুল্লাহ আল মাসুমকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একইভাবে মাগুরা ইউনিয়নের কাজি গোলাম রহমানকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি জালালপুর ইউনিয়নের এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে ও মেয়ের বিয়ে পড়ান ২৬ আগস্ট রাতে। তাঁকে ২৭ আগস্ট সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি তিনি ৩০০ টাকার নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা দেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবেন না। জানুয়ারি মাসেও তিনি আর একবার মুচলেকা দিয়েছিলেন বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করার অভিযোগে। আর সদর উপজেলার বক্ষ্ররাজপুর ইউনিয়নের কাজি মো. রওশন আলমের বিরুদ্ধেও দুটি বাল্যবিবাহ পড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।