বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহগুচ্ছের মেলা ও পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পে বিরল ঘটনার সাক্ষী জ্যোতির্বিজ্ঞানপ্রেমীরা

গ্রহগুচ্ছের মেলা পর্যবেক্ষণের আয়োজন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান ক্লাব। তিন শতাধিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুরাগী এতে অংশ নিয়ে অভূতপূর্ব দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করেন। শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষককেন্দ্র (টিএসসি) ভবনের ছাদেছবি: সংগৃহীত

রাতের আকাশ নিয়ে উৎসাহীদের জন্য অন্য রকম এক চমকপ্রদ রাত। সন্ধ্যা নামার পরই সেই চমকের সূচনা। আকাশে একে একে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে গ্রহগুলো। একটি বা দুটি নয়, আকাশে একই সঙ্গে দেখা যায় ছয়টি গ্রহ। বিরল এই মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছিল গ্রহগুচ্ছের মেলা ও পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প।

শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষককেন্দ্র (টিএসসি) ভবনের ছাদে এমন আয়োজন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ক্লাব (বিইউপিসি)। এতে অংশ নেন জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুরাগী ৩০০–এর বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অন্যরা।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহীদের এমন উপস্থিতিতে আয়োজনটি যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রচারণা কর্মসূচি দুরবিন এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।

একটি স্মার্ট দুরবিন (টেলিস্কোপ) এবং দুটি অপটিক্যাল দুরবিনের সাহায্যে অংশগ্রহণকারীরা সৌরজগতের পাঁচটি গ্রহ—মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, শুক্র ও বুধ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন। পাশাপাশি, তাঁরা ওরিয়ন নেবুলা (গ্যাস মেঘ) এবং অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির (আকাশগঙ্গা) মোহনীয় দৃশ্যও উপভোগ করেন।

আয়োজকেরা জানান, সূর্যের ছয়টি গ্রহ কাছাকাছি এসে এক সারিতে একাধিক গ্রহ অবস্থান করলে মহাজাগতিক পরিভাষায় তাকে ‘প্ল্যানেটারি অ্যালাইনমেন্ট’ বলে। এতে গ্রহগুলো একে অপরের কাছাকাছি চলে আসে না। তবে তাদের অবস্থান এমন হয় যে পৃথিবীর সাপেক্ষে তারা এক সারিতে রয়েছে বলে মনে হয়। মহাকাশ বিষয়ে উৎসাহী ব্যক্তিরা এগুলো আকাশ পরিষ্কার থাকলে খালি চোখে কিংবা অপরিষ্কার থাকলে স্মার্ট টেলিস্কোপ বা অপটিক্যাল টেলিস্কোপ ব্যবহার করে অবলোকন করতে পারেন।  

জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুরাগীরা অভূতপূর্ব দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করেন। শনিবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষককেন্দ্র ভবনের ছাদে
ছবি: সংগৃহীত

গ্রহগুচ্ছের মেলায় অংশ নেওয়া পদার্থবিজ্ঞান ক্লাবের সদস্য আল–আমিন বলেন, ‘বিজ্ঞানচর্চা শুধু শিক্ষার বিষয় নয়, এটি আমাদের কল্পনা ও সৃষ্টিশীলতাকে প্রসারিত করে। দেশের উন্নতির জন্য পদার্থবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোতে অগ্রগতি খুবই জরুরি। এ লক্ষ্যেই আমরা এ ধরনের আয়োজন করেছি। মহাবিশ্বের বিস্ময় অনুসন্ধানে এ আয়োজন আমাদের আরও বেশি আগ্রহী করবে।’

আয়োজকদের ভাষ্য, এ ধরনের উদ্যোগ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের অঞ্চলে পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলবে। এই আয়োজন শুধু বিজ্ঞানপ্রেমীদের মিলনমেলা নয়, এটি তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানের প্রতি অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সহায়তা করবে। ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাব আরও বেশ এ ধরনের আয়োজন করে বিজ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনুরাগী করে তুলতে উদ্যোগ নেবে।

এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আকাশের এই বিস্ময়কর দৃশ্য আমাদের জানার সীমানা পেরিয়ে নতুন জগৎ অন্বেষণে অনুপ্রাণিত করে। এ ধরনের আয়োজন তরুণদের মনে বিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহল এবং ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। আমাদের দেশে এখনো জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের ওপর পড়াশোনা বা গবেষণার তেমন কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। আশা করি ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’