স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাধা বিএনপি, নির্ভার আ.লীগ প্রার্থী 

  • এ আসনে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার।

  • নৌকার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এ আসনে নির্বাচনও তেমন জমে
    উঠছে না বলে জানান সাধারণ মানুষ। 

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

ময়মনসিংহের ১১টি আসনের মধ্যে একমাত্র আসন ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর ও তারাকান্দা), যেখানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। এ আসনে মোট সাতজন প্রার্থীর মধ্যে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার।

শাহ শহীদ সারোয়ার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হলেও নির্বাচনে তিনি দলীয় কোনো ধরনের সুবিধার বদলে উল্টো বাধার মুখে পড়েছেন। এতে নৌকার প্রার্থী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ নির্ভার অবস্থায় রয়েছেন।

নৌকার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এ আসনে নির্বাচনও তেমন জমে উঠছে না বলে জানান সাধারণ মানুষ। গত বুধবার সরেজমিনে এ আসনের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া যায়। তারাকান্দা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম নলচাপড়া থেকে সদরে আসেন আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, উপজেলা সদরেই নির্বাচনের তেমন আমেজ নেই। গ্রামে আরও কম। যেকোনো কারণেই হোক গ্রামের মানুষ ভোট দিতে আগ্রহী বলে মনে হয় না।

গোপালপুর, মধুপুর, বকশিমুল ও তারাকান্দা এলাকা ঘুরে মান্নানের কথার প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব এলাকায় দেখা যায়, নির্বাচনের তেমন আমেজ নেই। বিভিন্ন বাজারে নৌকার প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়লেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোস্টার খুব একটা চোখে পড়ে না।

সাধারণ মানুষ এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুলপুর ও তারাকান্দা আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শরীফ আহমেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ারকে। তবে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির নেতারাই তাঁর বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় শাহ শহীদ সারোয়ারকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গুটি কয়েক নেতা সারোয়ারের পক্ষে থাকায় তাঁদেরও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

শাহ শহীদ সারোয়ারের নির্বাচনের অন্যতম সমন্বয়ক মোজাম্মেল হোসেন ময়মনসিংহ জেলা উত্তর বিএনপির সদস্য ছিলেন। নির্বাচনে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করায় সম্প্রতি তাঁকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। মোজাম্মেল বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরাই গোপনে গোপনে সারোয়ারকে ভোট না দিতে বলছেন। দুই দিন আগে বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মীরা শাহ শহীদ সরোয়ারের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। এ অবস্থায় দলীয় সহযোগিতার চেয়ে উল্টো বাধাই বেশি দেখা যাচ্ছে। তারপরও বাধা অতিক্রম করে দলের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে আমরা কাজ করছি।’ 

তারাকান্দা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম তালুকদার বলেন, শাহ শহীদ সারোয়ার একজন স্বার্থপর মানুষ। তিনি দলের স্বার্থের চেয়ে নিজে ‘এমপি’ হওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী। যে কারণে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাররাও তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ। কাজেই বিএনপির কোনো সমর্থক তাঁকে ভোট দেবে, এমন প্রশ্নই আসে না।

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নৌকার প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের জয় প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করলেও তাঁর পক্ষে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। তাঁদের উদ্দেশ্য উৎসবমুখর নির্বাচনের। ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে রয়েছে আওয়ামী লীগের নানা তৎপরতা।

তারাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী (রণু ঠাকুর) বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী বিগত সময়ে ফুলপুর ও তারাকান্দায় অতুলনীয় উন্নয়ন করেছেন। যে কারণে সাধারণ মানুষ তাঁকে আবারও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। আমরা সর্বস্তরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’

এ আসনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির এনায়েত হোসেন, ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মুহাম্মদ তৈয়্যেব হোসাইন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কামরুল হাসান, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের তোফাজ্জল হোসেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) শেখ আলা উদ্দিন।