দুই বছরে কমেছে ৪০০ বিঘা ফসলি জমি 

অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ, পুকুর খনন ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। 

ফসলি জমির মধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে বসতবাড়ি। গতকাল দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার দাউদপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে গত দুই বছরে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় প্রায় ৪০০ বিঘা ফসলি জমি কমেছে। ফলে ফসল উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

উপজেলা পরিসংখ্যান দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিরামপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২০২০ সালে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৭০০ একর। আর ২০২২ সালের শেষের জরিপে সেই জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৫৭০ একর। এ দপ্তরের হিসাবমতে, গত দুই বছরে উপজেলায় দুই ফসলি ও তিন ফসলি ১৩০ একর জমি কমে গেছে। তবে বেসরকারি হিসাবে, জমির পরিমাণ কমেছে ২০০ একরের বেশি। জমি কমার কারণের মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নত জীবনযাত্রার সঙ্গে উন্নত আবাসনের চাহিদার বেড়ে যাওয়া এবং যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের জন্য নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ। এ ছাড়া রয়েছে অফিস ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ। ভবিষ্যতে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া এখনই রোধ করা না গেলে এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে। 

উপজেলায় ফসলি জমি কমে যাওয়ার অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে সরকারি উদ্যোগে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে খাসজমিতে বাড়ি নির্মাণ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চার ধাপে ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি নির্মাণ হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি বাড়িতে ঘর, ছোট আঙিনা ও চলাচলের রাস্তা করতে আড়াই থেকে তিন শতাংশ করে জমি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে এ প্রকল্পের জন্যই ১০০ বিঘার বেশি দুই ফসলি ও তিন ফসলি খাসজমি ব্যবহার করা হয়েছে। 

উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব হোসেন সম্প্রতি ধানি জমিতে নতুন বাড়ি নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে গ্রামের ভেতরে যৌথ পরিবারে ছিলাম। পরিবারের লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখন সেখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। পাড়ায় বাড়ি করার মতো জায়গাও নেই। অনেকটা বাধ্য হয়েই মাঠের আবাদি জমি কিনে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, কৃষি দপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ফসলি জমিতে বাড়িঘর ও স্থাপনা নির্মাণে সব সময়ই নিরুৎসাহিত করে থাকেন। সেই সঙ্গে একান্ত প্রয়োজনে অনাবাদি ও পতিত জমিতে বাড়িঘর নির্মাণের পরামর্শ দেন। আবাদি জমি কমে গেলেও ফসল উৎপাদন ও খাদ্যচাহিদা মেটাতে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য কৃষককে একই জমিতে শস্যাবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অধিক ফসল ফলানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আর পৌরসভা ও ইউনিয়নের মধ্যে ফসলি জমিতে বাড়িঘর বা কোনো স্থাপনা করতে হলে সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে হয়। যদি কেউ এ বিষয়ে অনুমতি না নেন, তাহলে সেটি বেআইনি হবে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।