চট্টগ্রামে শহীদ মিনারে মানুষের ঢল

ভোর রাত থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রামের অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন বয়সের লোকজন। আজ সকাল ৮টায়ছবি- সৌরভ দাশ

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ সমবেত কণ্ঠে এ গান গেয়ে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভাষাশহীদদের। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার চট্টগ্রামের শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। এবারও মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সিটি মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক জাতিগোষ্ঠী স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে। কিন্তু ভাষার জন্য রক্ত দেওয়ার ইতিহাস অন্য কোনো জাতির নেই। এ ভাষাকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করাই হোক আমাদের একুশের অঙ্গীকার।’

শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল। আজ সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের অস্থায়ী শহীদ মিনারে
ছবি- সৌরভ দাশ

মেয়রের পর একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম নগর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘মাতৃভাষা বাংলার সর্বস্তরে প্রচলনের জন্য সরকার আইন করেছে এবং হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। আমরা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা যেন প্রাধান্য পায়, সে জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ভাষাশহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের বিষয়েও আমরা কাজ করছি।’

আজ ভোর থেকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ প্রভাত ফেরিতে অংশ নেন। এ সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন করে চট্টগ্রাম ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, আইনজীবী সমিতি ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রভাতফেরি নিয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে ফুল নিয়ে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

অমর একুশের অনুষ্ঠানে শিশুদের নিজেদের তৈরি শহীদ মিনারের প্রদর্শনী হয়। আজ সকালে নগরের নন্দনকাননের ফুলকি বিদ্যালয়ে
ছবি- সৌরভ দাশ

ফুলকির আয়োজন

নগরের নন্দনকাননে অবস্থিত ছোটদের সাংস্কৃতিক জগৎ ফুলকির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ভাষা শহীদ দিবস পালিত হয়। এ সময় শিশুরা বিদ্যালয়ের অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। পাশাপাশি এ উপলক্ষে গান, কবিতা, নাটিকা ও ব্রতচারী নৃত্য পরিবেশন করে ফুলকির সহজপাঠ ও সোনার তরী বিদ্যালয়ের শিশুরা। একুশ উপলক্ষে শিশুদের তৈরি করা শহীদ মিনারের প্রদর্শনীর আয়োজনও করা হয়। ফুলকির পাশাপাশি নগরের সব সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা।

এ ছাড়া দিনভর প্রমা, উদীচী, বোধনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নগরের নিউমার্কেট, সিআরবি, শিল্পকলা একাডেমি ও চেরাগী পাহাড় এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।