ভ্রাম্যমাণ আদালত
প্রতীকী ছবি

একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপত্রে (প্যাডে) এক চিকিৎসকের নাম; কিন্তু নিজেদের নাম গোপন করে প্রতি সপ্তাহে রোগী দেখছিলেন ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসক। এভাবেই কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্রামের সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চলছিল প্রতারণা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোগী সেজে ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ থাকা চিকিৎসককে ফোন করেন। এতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি অন্য চিকিৎসকের প্রতারণার সত্যতা পাওয়া যায়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে গুনতে হয়েছে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অন্য চিকিৎসকের নামসহ ব্যবস্থাপত্র ব্যবহার করা চিকিৎসককে দিতে হয়েছে মুচলেকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় আজ শুক্রবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযান চালান ইউএনও এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ। উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের আমতলী বাজারে অভিযান চালিয়ে তিনি পদ্মা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। সেই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আর চেম্বার করবেন না মর্মে অভিযুক্ত চিকিৎসক তপন দেবনাথের কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের আমতলী বাজারে পদ্মা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক চিকিৎসকের নামে প্রচার-প্রচারণা ও মাইকিংসহ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু ওই চিকিৎসকের প্যাডে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসক দিয়ে রোগী দেখানো হচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন। আজ দুপুরে ইউএনও এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ঘটনার সত্যতা পান। ভ্রাম্যমাণ আদালত অনুসন্ধানে জানতে পারেন, চিকিৎসক সুব্রত সাহার নামে তৈরি করা ব্যবস্থাপত্রে (প্যাডে) একেক দিন একেক চিকিৎসক নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখছেন। চিকিৎসক সুব্রত সাহা সর্বশেষ ১৮ আগস্ট ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেছেন। কিন্তু চিকিৎসক সুব্রত সাহার প্যাড ব্যবহার করে গত ২৫ আগস্ট এবং আজ ভিন্ন দুজন চিকিৎসক রোগী দেখেছেন।

গত ২৫ আগস্ট চিকিৎসক সুব্রত সাহা উপস্থিত ছিলেন না; কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক তপন দেবনাথকে চিকিৎসক সুব্রত সাহা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।

ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ২৫ আগস্ট চিকিৎসা নিয়েছেন এমন একজন জানান, ওই দিন চিকিৎসক সুব্রত সাহা উপস্থিত ছিলেন না; কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক তপন দেবনাথকে চিকিৎসক সুব্রত সাহা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়।

বিষয়টি জানার পর ইউএনও রোগী সেজে চিকিৎসক সুব্রত সাহাকে ফোন দেন। সুব্রত সাহা জানান, তিনি সর্বশেষ ১৮ আগস্টের  পর আর বিজয়নগর উপজেলায় রোগী দেখেননি।

ইউএনও এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক খুরশিদ আলম নিজের প্রতিষ্ঠানের এই অপরাধ স্বীকার করেন। নিজের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমন হবে না মর্মে লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পাশাপাশি চিকিৎসক তপন দেবনাথ মুচলেকা দিয়েছেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী পদ্মা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযান পরিচালনার সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মাসুম, বিজয়নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জি এম কাদের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কল না ধরায় পদ্মা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক খুরশিদ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।