পাপোশ তৈরি করে সুদিন এসেছে শেফালীর

সুতা ও ঝুট কাপড় তুলে পাপোশ তৈরি করছেন শেফালী ওঁরাও। গত শনিবার নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার জোয়ানপুর গ্রাম
ছবি: প্রথম আলো

অজপাড়াগাঁয়ে দরিদ্র পরিবারে জন্ম শেফালী ওঁরাওয়ের। ছোটবেলা থেকে অভাবের মধ্যে বড় হয়েছেন। কিশোরী বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। এক অভাবের সংসার থেকে আরেক অভাবের সংসারে গিয়ে পড়েন তিনি। সেখানেও রুটি-রুজির জন্য তাঁকে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়। সংসারের সদস্য সংখ্যা বাড়লেও রোজগার বাড়ে না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো তাঁদের। তবে পাপোশ তৈরির কাজ শেখার পর তাঁর সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।

শেফালী নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার জোয়ানপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত শনিবার শেফালী ওঁরাওয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাটির দেয়াল ও টিনের ছাউনির দুই কক্ষের বাড়ি তাঁদের। বাড়ির সামনের অংশ মাটির দেয়াল তুলে প্রাচীর দেওয়া। সেই প্রাচীরের এক অংশে টিনের চালা দিয়ে গরু রাখার স্থান এবং আরেকটি অংশে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি পাপোশ তৈরির ফ্রেম বা কাঠামো বসানো। সেখানে একটি কাঠের টুলে বসে ফ্রেমে নানা রঙের ঝুট কাপড় ও সুতা তুলে তুলে পাপোশ তৈরি করছেন শেফালী। তাঁর স্বামী রসিক এক্কা একজন কৃষিশ্রমিক। তাঁদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে বিথি এক্কা জোয়ানপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছেলে বাচ্চু এক্কা জোয়ানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ছে।

পাপোশ তৈরি করতে করতে শেফালী বলেন, আগে গৃহস্থের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তাঁর সংসার চলত। কিন্তু কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করলে বছরের ছয়-সাত মাস কাজ থাকত না। তখন হাতে টাকা না থাকায় বাজার-সদাই করতে পারতেন না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো। পাঁচ-ছয় বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী এসে তাঁদের গ্রামের কয়েকজনকে পাপোশ বোনা শিখতে বলেন। তখন তাঁর পাড়ার চারজন এক মাস ধরে এ প্রশিক্ষণ নেন। এরপর পাপোশ বানানোর কাঠের ফ্রেম দেন। সে থেকে তাঁর পাপোশ বোনা শুরু।

শেফালী আরও বলেন, বগুড়ার সান্তাহার থেকে তাঁর স্বামী সুতা ও ঝুট কাপড় কিনে এনে দেন। সংসারের অন্যান্য কাজ সেরে অবসর সময়ে কিংবা কাজের ফাঁকে ফাঁকে পাপোশ তৈরির কাজ করেন তিনি। দিনে চার থেকে পাঁচটা পাপোশ তৈরি করতে পারেন তিনি। সুতা কেনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পাপোশে তাঁর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা লাভ থাকে। দিনে ১২০-১৩০ টাকা আয় হয়। আর মাসে আয় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। পাপোশ বানানোর টাকা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানোর পর কিছু টাকা জমা হয়। সেই জমানো টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। দুটা গরু বিক্রি করেছেন। আরও দুটো গরু ও একটা বাছুর আছে।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসান বলেন, গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা পাপোশ তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা আনছেন। এতে নারীদের একধরনের ক্ষমতায়ন হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।