শীতেই বাজারে এল গরমের তরমুজ, দামও চড়া
সড়কের পাশে ফুটপাতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তরমুজ। বেশির ভাগই ছোট ও মাঝারি আকারের। অথচ দাম নেওয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। গত শুক্রবার রাতে তরমুজ বিক্রির এই দৃশ্য দেখা যায় কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
কেবল এই এলাকা নয়, শীত মৌসুমেই উপজেলার প্রায় প্রতিটি হাটবাজারে মিলছে আগাম তরমুজ। অসময়ের ফল, তাই এর স্বাদ নিতে আগ্রহ নিয়েই তরমুজ কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তরমুজ কেনার সময় কথা হয় টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আবদুল গফুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের কাছে তরমুজ অনেক প্রিয়। তাই ৭০০ টাকায় দুটি তরমুজ কিনেছেন তিনি। আরেক ক্রেতা মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, দামে চড়া হলেও বছরের নতুন ফল, তাই কিনেছেন। তবে তরমুজের দাম অনেক বেশি।
যে বিক্রেতার কাছ থেকে দুজন তরমুজ কেনেন, তাঁর নাম বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, একটি জিপে করে আট শতাধিক তরমুজ বাহারছড়া থেকে কিনে নিয়ে এসেছেন তিনি। এর অর্ধেক ফুটপাতে সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বাকি অর্ধেক আড়তে রেখেছেন।
বাদশা মিয়া বলেন, উপজেলার বাহারছড়ার ও হোয়াইক্যংয়ের পাহাড়ি ঢালু ও উঁচু জমিতে আগাম তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেশি দামে পাকা তরমুজ কিনতে হচ্ছে। তাই দামও কিছুটা বেশি। তাঁর কেনা প্রতিটি তরমুজের গড়ে দাম পড়েছে ১৫০ টাকা। তিনি আকারভেদে দাম নির্ধারণ করে এসব তরমুজ বিক্রি করছেন।
কৃষকেরা জানান, দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় টেকনাফের অনেক কৃষক আগেভাগেই তরমুজ চাষ শুরু করেন। আগাম তরমুজ চাষে চাষিরা লাভবান হন। আকার কিছুটা ছোট হলেও টেকনাফের আগাম তরমুজ স্বাদে মিষ্টি।
উপজেলার বাহারছড়ার তরমুজচাষি নুরুল আমিন বলেন, প্রতি কানি (৪০ শতক) জমিতে ২ হাজার ২০০টির মতো তরমুজের থালি করা যায়। প্রতি কানিতে সার, বীজ ও শ্রমিক বাবদ খরচ পড়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। আগাম চাষাবাদ করা তরমুজ শুরুতে আকারে কিছুটা ছোট হয়। এরপর বড় তরমুজ পাওয়া যায়। এ বছর তরমুজ চাষ করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হবে তাঁর।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, গত মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চার শতাধিক চাষি ১২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করেছিলেন। এবার মৌসুমের শুরুতে উপজেলার পাহাড়ি ঢালু ও উঁচু বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে আগাম তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। এ ছাড়া আমন ধান কাটা শেষ হওয়ার পর আরও প্রায় ৮০ হেক্টরের বেশি ধানি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম কুতুবী বলেন, টেকনাফের গাঢ় লাল রং ও মিষ্টি স্বাদের তরমুজের বিশেষ কদর রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। সাধারণত নভেম্বর মাসে তরমুজ চাষ শুরু হয়। তবে এর কয়েক মাস আগে টেকনাফের অনেক কৃষক তরমুজ চাষাবাদ শুরু করেন।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত আগাম জাতের তরমুজ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে হাটবাজারে আসে। এবার জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে বাজারে চলে এসেছে। আগাম চাষে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা সেদিকে ঝুঁকছেন।