বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বিনিয়োগ নিয়ে দেশে অনেক সার্কাস দেখতে পাচ্ছি, দুঃখের সঙ্গে বলছি। কত রকমের সার্কাস। আমার কথাগুলো বলা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। তবু বলছি, যারা বিনিয়োগ বোঝে, তারা জানে এই সার্কাসের মাধ্যমে বিনিয়োগ হবে না। বিনিয়োগ হতে হলে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত, স্থিতিশীল সরকার থাকতে হবে। তখনই বিনিয়োগকারীরা সরকারের মানসিকতা, দায়বদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। তারুণ্যের ভাবনা ও অধিকার নিয়ে চার বিভাগে বিএনপির কর্মসূচি শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের এই সেমিনারের মাধ্যমে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে থেকে বিনিয়োগ আনতে হলে আগে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সেটা তখনই সম্ভব, যখন একটি প্রকৃত অর্থে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার থাকবে। আজকে কি বাংলাদেশে সেই অবস্থা আছে? আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় দিয়েছি, কিন্তু এখনো দেশে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার আসেনি।’
চাকরির সুযোগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশের জন্য এক নম্বর অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার কী, আমি বলব বিনিয়োগ। দুই নম্বরও বিনিয়োগ, তিন নম্বরও বিনিয়োগ। বিনিয়োগ ছাড়া আত্মকর্মসংস্থান বা শিল্পায়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপির রাজনীতি শুরু করেছিলেন মুক্তবাজার অর্থনীতি ও গণতন্ত্রায়ণের মাধ্যমে। আমরা সেই ধারাবাহিকতায় সবার জন্য অর্থনীতির কথা বলি, গণতন্ত্রায়ণের কথা বলি। এগুলো ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব নয়।’
সেমিনারে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা শপথ নিয়েছি, ১৮ মাসে এক কোটি চাকরির ব্যবস্থা করব। আর সেটি হবে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নতুন ব্যবস্থার জন্যই ৩১ দফা দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কারও মাথায় না ঢোকে, তাহলে কিছু করার নেই। বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এখানে যে সম্মেলন হয়েছে, আমরা ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবশেষে তাদের প্রশ্ন, তোমাদের নির্বাচন কবে?’
রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিএনপির বড় পরিবর্তন হয়েছে দাবি করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এখানে রয়েছেন। কিন্তু কেউ বক্তব্য দেননি। অন্যকে বলার সুযোগ দিয়েছেন। আপনাদের কথা শুনেছি আমরা। বিএনপি করেন না এমন লোকজনও এসে এখানে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের মনের কথা তুলে ধরেছেন। নানা প্রশ্ন করেছেন।’
আগামী নতুন বাংলাদেশে তরুণদের কর্মক্ষম হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিনের উপস্থাপনায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমর ফারুক ইউছুফ, ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য নাজিম উদ্দিন, স্টেট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আকতার হোসেন খান, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য নসরুল কদির, ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সাঈদ আল নোমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য কামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নাহরিন আই খান প্রমুখ।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে কাল শনিবার নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা’র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারুণ্যের ভাবনা ও অধিকার নিয়ে চট্টগ্রামের পর ১৬ মে খুলনায়, ২৩ মে বগুড়ায় এবং ২৭ মে ঢাকার মাধ্যমে কর্মসূচির শেষ হবে।