কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির বাধায় নিয়োগ পরীক্ষা ভন্ডুল

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির বাধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা ভন্ডুল হয়েছে। উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষক সমিতি এতে বাধা দেয়। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

এ সময়ে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতাদের তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রধান অনুপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষক সমিতির নেতাদের অভিযোগ, উপাচার্য নিয়ম লঙ্ঘন করে শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এ ছাড়া তিনি শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম করছেন। তাঁর একচ্ছত্র ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের পরীক্ষা ছিল। সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ওই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এতে ৩৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৪ জন উপস্থিত ছিলেন। লিখিত পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একদল শিক্ষক পরীক্ষাকক্ষের সামনে যান। তাঁরা সেখানে গিয়ে দেখতে পান, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রধান শেখ মুকছেদুর রহমান সেখানে নেই। এরপর শিক্ষক সমিতির নেতারা ওই পরীক্ষায় বাধা দেন।

শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, কারা এই পরীক্ষা নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের পদোন্নতি ও চাকরি স্থায়ীকরণ আটকে আছে। শিক্ষক পরীক্ষায় অনিয়ম হচ্ছে। পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে অনিয়মের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এ সময় উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতাদের তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। বাগ্‌বিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে শিক্ষকনেতাদের উদ্দেশে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা মাস্তানি করার জায়গা নয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতির সামনে হেয় করছেন।’ জবাবে শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ক্লু পেয়েছি, আপনি আপনার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে এই পরীক্ষা নিচ্ছেন।’ সমিতির সদস্য দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় ডিন নেই, বিভাগীয় প্রধান নেই—এটা কেমন পরীক্ষা।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান উপাচার্যকে বলেন, পরীক্ষার হলে বহিরাগত ব্যক্তিরা কেন? কেন অছাত্ররা? কেন প্রশ্ন সিলগালা না করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে যাইনি। সেখানে বহিরাগত ব্যক্তিদের আনা হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের দপ্তরের ঘটনা মনে করে যাইনি। তবে বিভাগে ছিলাম।’

ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রধান শেখ মুকছেদুর রহমান বলেন, ‘আমি নিয়োগ পরীক্ষায় যাইনি।’

এ বিষয়ে উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা হয়নি। ৩৫ জনের মধ্যে ২৪ জন ছিলেন।