যুবলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সভাস্থলের মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ

ভাঙচুর করা চেয়ার
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা যুবলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ফতেহাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মিসভার প্যান্ডেলে হামলায় চালিয়ে মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শনিবার বেলা তিনটায় ফতেহাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মিসভা আয়োজন করে। উপজেলা যুবলীগ একই স্থানে একই সময় কর্মিসভা আহ্বান করে। এরপর উপজেলা প্রশাসন গিয়ে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে বিকেলে পুলিশের সামনেই ১৪৪ ধারা ভেঙে সেখানে কর্মিসভা করেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেন দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। যুবলীগের নেতা–কর্মীরা সংসদ সদস্যের এবং ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুসারী। গত পাঁচ বছরে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে একাধিকবার হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কর্মিসভার জন্য প্যান্ডেল করি। আমাদের কর্মিসভার খবর পেয়ে সংসদ সদস্য সমর্থিত যুবলীগের নেতা–কর্মীরা একই স্থানে একই সময়ে কর্মিসভার ডাক দেন। আমাদের কর্মিসভা শুরুর আগেই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, যুবলীগ কর্মী খন্দকার ফখরুল ইসলাম, শাহরিয়ার, ফরহাদ হোসেন, বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে আমাদের মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। তাঁরা ঘটনাস্থলে অবস্থান না করতে পেরে সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করতে প্রশাসনকে চাপ দেন। আমরা ছাত্রলীগ কর্মীদের চাপে কর্মিসভা চালাতে বাধ্য হই।’

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার বেলা তিনটায় চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কর্মিসভা আহ্বান করেছিলাম। উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা আমাদের কর্মীদের সভাস্থলে জমায়েত হতে দেননি। তাঁরা আমাদের লোকদের স্কুল মাঠ থেকে বের করে দেন। প্রশাসন সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করায় আমরা কর্মসূচি বাতিল করি। তাঁরা নিজেরা নিজেদের মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে আমাদের দোষ দিচ্ছেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। ১৪৪ ধারা জারির আগে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আমি ঘটনাস্থলে বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ছিলাম। বিকেল পাঁচটার পর ছাত্রলীগ কর্মিসভা করে।’

দেবীদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বলেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ একই স্থানে একই সময়ে কর্মিসভা ডাকায় ইউএনও সাহেবের নির্দেশে ঘটনাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। পরে ছাত্রলীগ বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে সেখানে সভা করে।

ছাত্রলীগ, যুবলীগ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা তিনটায় দেবীদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ চান্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কর্মিসভা আহ্বান করে। পাল্টা হিসেবে উপজেলা যুবলীগ সেখানে একই সময়ে কর্মিসভা করার ঘোষণা দেয়। ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা ওই মাঠে প্যান্ডেল করার পর বেলা দুইটার দিকে পাশের একটি হোটেলে ভাত খেতে যান। বেলা ২টা ২০ মিনিটে যুবলীগের একদল নেতা–কর্মী এসে চেয়ার ও মঞ্চ ভাঙচুর করে চলে যান। খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা দৌড়ে এসে দেখেন যুবলীগের নেতা–কর্মীরা পালিয়ে যাচ্ছেন।

এ অবস্থায় ইউএনও নিগার সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি–দেবীদ্বার সার্কেল) আমিরুল্লাহ ও দেবীদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। বেলা তিনটা থেকে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন ইউএনওসহ অন্যরা।

এদিকে বিকেল পাঁচটার পর সেখানে ছাত্রলীগ সদস্য আরেফিন ফয়সালের সভাপতিত্বে কর্মিসভা শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম প্রধান বক্তা এবং দেবীদ্বার উপজেলা ছাত্রলীগ আহ্বায়ক মো. আসাদুর রহমান বিশেষ বক্তা ছিলেন। এ ছাড়া গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোকবল হোসেন, দেবীদ্বার উপজেলা মত্স্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মাসুদ, ৮ নম্বর জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন।