চার মাস পর জানলেন তাঁর নামে অন্যজন চাল নেন 

সম্প্রতি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে গিয়ে উপকারভোগীর তালিকায় নিজের নাম দেখে হাছনা বিস্মিত হন।

হাছনা বেগম

হতদরিদ্র নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভিডব্লিউবির (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) আওতায় প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা হাছনা বেগমের। অথচ তাঁর স্থলে চার মাস ধরে চাল নিচ্ছিলেন সাজনা বেগম নামের প্রতিবেশী আরেক নারী। 

সম্প্রতি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে গিয়ে উপকারভোগীর তালিকায় নিজের নাম দেখে হাছনা বিস্মিত হন। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নে। হাছনা ও সাজনার বাড়ি স্থানীয় উত্তর সাগরনাল গ্রামে। 

হাছনা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ভিডব্লিউবির উপকারভোগী হতে ২০২২ সালের শেষের দিকে তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির সহযোগিতায় অনলাইনে আবেদন করেন। কিছুদিন পর স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হারিছ উদ্দিন মুঠোফোনে কথা বলে তাঁর নাম-ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এ সময় আর কিছু বলেননি। এরপর চার মাস কেটে যায়। সম্প্রতি হাছনা কয়েকজন উপকারভোগীর কাছ থেকে জানতে পারেন, চাল বিতরণের সময় তাঁর নাম ডাকা হয়। তবে চাল নেন সাজনা। এ খবর পেয়ে তিনি ইউপি কার্যালয়ে ছুটে যান। ইউপির সচিব উপকারভোগীদের তালিকা বের করে তাতে হাছনার নাম দেখে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। 

হাছনা বলেন, ইউপি সদস্য হারিছের কাছে গেলে তিনি তাঁর (হাছনা) নামে সাজনার চাল নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যাচাই-বাছাইকালে ভুলে সাজনার বদলে তাঁর নাম তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। একপর্যায়ে ইউপি সদস্য তাঁর হাতে মে মাসে বরাদ্দ হওয়া ৩০ কেজি চালের একটি বস্তা তুলে দেন। বাকি চার মাসের চালের হিসাব চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে ইউপি সদস্য ভিডব্লিউবির কার্ডে টিপসই নিয়ে কার্ডটি তাঁকে বুঝিয়ে দেন। 

হাছনা বলেন, ইউপি সদস্য ৩০ কেজি চাল সাজনা ও তাঁকে ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী, সঞ্চয় হিসেবে প্রতি মাসে চাল নেওয়ার সময় ২২০ টাকা করে নিজের ব্যাংক হিসাব নম্বরের অনুকূলে জমা দিতে হয়। সাজনা আগের চার মাসের সঞ্চয় জমা দেন। এরপরও ইউপি সদস্য তাঁর কাছ থেকে জানুয়ারি থেকে মে মাসের সঞ্চয়ের মোট ১ হাজার ১০০ টাকা নেন। চাল না নিয়ে চার মাসের সঞ্চয়ের টাকা কেন দেবেন—এ প্রশ্ন করলে ইউপি সদস্য তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। 

সাগরনাল ইউনিয়নে ভিডব্লিউবির আওতায় ২৬২ জন দুস্থ নারী জানুয়ারি মাস থেকে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তাঁরা এ সহায়তা পাবেন। দুই বছর পর ব্যাংক হিসব নম্বরে জমা হওয়া সঞ্চয়ের টাকা একসঙ্গে ফেরত পাবেন। 

এ বিষয়ে জানতে সাজনার স্বামী নূর উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

ইউপি সদস্য হারিছ বলেন, সাজনা আর হাছনার চেহারা প্রায় একই রকমের। আগে থেকে যোগাযোগ করায় সাজনাকে উপকারভোগী নির্বাচনের কথা ছিল। কিন্তু অনলাইনে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময় ভুলে হাছনার নাম তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। হাছনার বদলে সাজনার চাল নেওয়ার বিষয়টি তাঁরা আগে থেকে জানতেন না। সম্প্রতি বিষয়টি নজরে পড়ে। সাজনা গরিব হওয়ায় দুজনে ভাগাভাগি করে চাল নেওয়ার প্রস্তাব দেন হাছনাকে। আর যেহেতু সঞ্চয় ফেরত মিলবে না, তাই বাকি চার মাসের টাকা হাছনাকে দিতে বলেন। এতে তিনি রাজিও হন। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়নি বলে ইউপি সদস্য দাবি করেন।