রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে এক জোড়া নতুন ট্রেনের চলাচল শুরু

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে নতুন দুটি ট্রেন উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনী ট্রেনকে সাজানো হয় নান্দনিক রূপে। শনিবার দুপুরে শিবচর রেলস্টেশনে
ছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে এই পথে আরও এক জোড়া নতুন কমিউটার ট্রেন চালু করল বাংলাদেশ রেলওয়ে। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর রেলস্টেশনে এক অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে ফিতা কেটে এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। এ সময় শিবচর রেলস্টেশন থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে একটি ট্রেন।

এ সময় জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর–ই–আলম চৌধুরী ও রেল মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী। আগামীকাল রোববার সকাল থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রেন দুটির চলাচল শুরু হবে রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে।

মূলত একটি ট্রেন দুটি ইঞ্জিন দিয়ে পরিচালিত হবে দুটি রুটে দুটি নামে। রাজবাড়ী থেকে ট্রেনটি এসে ভাঙ্গায় যাত্রবিরতি নেবে। সেখানে ইঞ্জিন বদলে আবার ঢাকা যাবে। এর মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ১২১ ও ১২৪ নম্বর ট্রেনটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘ভাঙ্গা এক্সপ্রেস’। আর ভাঙ্গা-রাজবাড়ী রুটে ১২২ ও ১২৩ নম্বর ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চন্দনা এক্সপ্রেস’।

ট্রেন উদ্বোধন উপলক্ষে শিবচর রেলস্টেশন চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, ট্রেন সুবিধায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল দক্ষিণবঙ্গ। আজ ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে চালু হলো আরও এক জোড়া ট্রেন। অল্প দিনের ব্যবধানে আরও কয়েকটি ট্রেন চালু হবে এ রুটে এবং খুব দ্রুত ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই পথে আরেকটি ট্রেন আমরা চালু করব। পরের ট্রেনটি নতুন বগি দিয়ে শুরু করব। আবার আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে খুলনা, যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন চালু হবে। ওই ট্রেন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত একটি রেললাইন বানানো হবে। সেটি আটটি জেলাকে যুক্ত করবে। কিন্তু এই অঞ্চলের মাটি ভালো না। তাই পুরো লাইনটি হবে এলিভেটেড (উড়াল)। অল্প দিনের মধ্যে ভাঙ্গা-বরিশাল রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে নতুন ট্রেনের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। শনিবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচর রেলস্টেশনে
ছবি: সংগৃহীত

রেলমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি, রেলে বর্তমানে দুইটা জোন আছে। আরও দুইটা জোন তৈরি করা হবে। এর একটা হবে ভাঙ্গা-ফরিদপুর। এটির জোনাল অফিস হবে ভাঙ্গায়। এতে করে ভাঙ্গায় রেলের সেবা আরও বাড়বে।’

এদিকে ট্রেন উদ্বোধন ঘিরে আজ সকাল থেকেই শিবচর স্টেশনে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন। উদ্বোধনী ট্রেনকেও সাজানো হয় নান্দনিক রূপে। নদীভাঙন অঞ্চলের মানুষ ট্রেন পেয়ে উচ্ছ্বসিত। স্বল্প সময়ে ঢাকায় যেতে পারার স্থানীয় লোকজনের চোখেমুখে ছিল আনন্দ।

স্থানীয় লোকজন জানান, শুধু যাতায়াত নয়, এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিতেও নতুন ট্রেনগুলো ভূমিকা রাখবে। ট্রেন যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন নতুন শিল্পও গড়ে উঠবে এসব এলাকায়।

ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার চাপ অনেকটাই কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার অসংখ্য লোক ঢাকায় বসবাস করেন। অনেকেই কষ্টে, মানবেতরভাবে বসবাস করেন। শিবচর থেকে ট্রেনের মাধ্যমে ঢাকায় অফিস করার সুযোগ হলে অনেকেই শিবচর ফিরে আসবেন।’

চিফ হুইপ বলেন, ‘আমরা চাই আস্তে আস্তে রাজধানীর চাপটা যেন কমে আসে। আমরা চাই, তারা শিবচরে ফিরে আসুক। শুধু তা–ই নয়, শিবচর থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করার সুযোগ দিলে, শিবচরের বাইরের লোকজনও শিবচরে এসে বসবাস শুরু করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারা বাংলাদেশেই যদি রেলপথের ব্যবস্থা হয়, তাহলে ইনশা আল্লাহ ঢাকা শহরের অনেক সমস্যা সমাধান হবে। পৃথিবীর উন্নত সব দেশেই রেল সার্ভিসের মাধ্যমেই মানুষ এ সুযোগ পেয়ে থাকে। ভারত, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশেই মানুষ ট্রেনে গিয়ে অফিস করে। ইনশা আল্লাহ আমাদেরও সেই স্বপ্ন পূরণ হবে।’

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, উদ্বোধন হওয়া ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছেড়ে শিবচর স্টেশন, পদ্মা স্টেশন পদ্মা সেতু ও মাওয়া স্টেশন হয়ে ৯টার মধ্যে ঢাকার কমলাপুর পৌঁছাবে। এর আগে ট্রেনটিই রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে আসবে ভোর ৫টায়। সন্ধ্যা ৬টায় ট্রেনটি কমলাপুর থেকে আবারও একই রুটে ফিরে আসবে। কর্মজীবী যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা এই ট্রেনে চড়ে স্বল্প খরচে বাড়ি থেকে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবেন।

রাজবাড়ী-ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী এই কমিউটার ট্রেন ২৪টি প্রথম, ৪৪টি শোভন চেয়ার এবং ৪২৪টি শোভন শ্রেণির আসনের ব্যবস্থা থাকবে। উভয় পথে ভাঙ্গা জংশন, শিবচর, পদ্মা ও মাওয়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্রবার। এই ট্রেনে শোভন চেয়ারে শিবচর থেকে ঢাকার ভাড়া ২০৫ টাকা এবং ভাঙ্গা থেকে ঢাকা ২২৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।