‘টেবিলের ওপর সিল মেরে দেখাই দিবেন, নৌকায় ভোট দিছি’

নোয়াখালীতে প্রকাশ্যে নারী ভোটারদের ভোট দিতে নির্দেশ দেন ইউপি সদস্য মো. শাহনাজছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

৭ জানুয়ারি ভোটের দিন নারী ভোটারদের প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারার নির্দেশ দিয়েছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার ২ নম্বর চরবাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহনাজ। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় নারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি উঠান বৈঠকে তিনি ওই নির্দেশ দেন। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

নারী ভোটারদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় ইউপি সদস্য শাহনাজ বলেন, ‘কোনো মা-বোন যদি পর্দার আড়ালে ঢুকে সিল মারেন, তাহলে আমি মনে করব, আপনারা নৌকায় ভোট দেননি। আমার যাঁরা মা-বোন, তাঁদের উদ্দেশে বলি, কেন্দ্রের ভেতরে পর্দা থাকে, ওই পর্দার ভেতরে ঢুকবেন না আপনারা; যদি ঢোকেন আমি মনে করব, ভোট দেওয়া হয়নি। টেবিলের ওপর সিল মেরে দেখাই দিবেন, নৌকায় ভোট দিছি।’

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপি সদস্য শাহনাজ নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনে নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর পক্ষে কাজ করছেন, যার অংশ হিসেবে তাঁর ওয়ার্ডের নারী ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠককালে তিনি ওই বক্তব্য দেন। এ আসনে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শিহাব উদ্দিন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ট্রাক প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন।

ইউপি সদস্যের প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার নির্দেশের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের কাছে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শিহাব উদ্দিন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এভাবে উঠান বৈঠকের নামে নারী ভোটারদের ডেকে ডেকে প্রকাশ্যে সিল মারার নির্দেশ দেওয়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করবে। তাই তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ভিডিওটি পাঠিয়েছেন। আজ লিখিত অভিযোগ করবেন। তিনি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ আশা করেন প্রশাসনের কাছে।

প্রকাশ্যে সিল মারার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মো. শাহনাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। কথা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রকাশ্যে সিল মারার কথা বলে ফেলেছি। শুনছি, আমাকে নাকি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আল আমিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে সিল মারাসংক্রান্ত ইউপি সদস্যের বক্তব্যের ভিডিওটি তিনি পেয়েছেন। ভিডিওটি এরই মধ্যে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে।