কোটি টাকার পশুর হাটে দুর্ভোগ কাদা

তারাগঞ্জ পশুর হাটে কাদার মাঝে দাঁড়িয়ে পশু কেনাবেচা করতে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের
ছবি: প্রথম আলো

উত্তরের ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট রংপুরের তারাগঞ্জ। বছরে আড়াই কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয়। রাজস্ব আয়ের সিংহভাগ আসে পশু কেনাবেচা থেকে। আড়াই কোটির বেশি টাকা রাজস্ব আয় হলেও উন্নয়নের তেমন ছোঁয়া লাগেনি এ হাটে। হাঁটুসমান কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে গরু-ছাগল কেনাবেচা করতে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত তারাগঞ্জে হাটবাজারের সংখ্যা ১৮। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট তারাগঞ্জ। উপজেলার একমাত্র এ পশুর হাট বসে প্রতি সোম ও শুক্রবার। প্রতি হাটে ৯০০ থেকে ১ হাজার পশু কেনাবেচা হয়। এ ছাড়া ধান, পাট, আলুসহ নানা রকম সবজি কেনাবেচা হয়। চলতি বছর ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার ছিল হাটবার। সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা যায়, পশুর হাটের চারদিকে কাদাপানিতে একাকার। লোকজন স্যান্ডেল-জুতা খুলে তুলে নিচ্ছেন হাতে। এরপর কাদাপানি মাড়িয়ে টেনেহিঁচড়ে পশুকে নিয়ে যাচ্ছেন নির্ধারিত জায়গায়। হাঁটাচলার সময় তাঁদের পা ৬ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত কাদার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। এর মধ্যে চলছে বেচাকেনা।

হাটে গরু বিক্রি করতে আসা হাড়িয়ারকুঠি গ্রামের মমিন মিয়ার (৫৫) এক হাতে গরুর দড়ি, অন্য হাতে জুতা। হাটের দক্ষিণে কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কাদার ছবি তুলতে দেখে মমিন মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘ফটো তুলে কী করবেন? হামার কষ্ট কায়ও দেখে না। এমতোন করি কি কাদাত দাঁড়ে গরু বেচা যায়? ৫০০ টাকা খাজনা তো কম নেয় না। তা হইলে হাটটা ঠিক করে না ক্যান?’

ওই হাটে গরু কিনতে আসা উত্তর পাড়া গ্রামের মুকুল হোসেন বলেন, দুই দিন পর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। আজ গরু কিনতে না পারলে বিপদে পড়বেন। তাই কাদার মধ্যে নেমে পড়েছেন গরু কিনতে। কিন্তু কাদা আর দুর্গন্ধের জন্য থাকা যাচ্ছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে।

যেজগদীশপুর গ্রামের পশুর ব্যবসায়ী মতিউল ইসলাম বলেন, ‘হাটটাত প্রস্রাব-পায়খানা করিবার জায়গাও নাই। নালাগুলা ময়লাতে ভর্তি। গরু হাটের ভেতরোত ময়লার ভাগাড় বানাইছে। তার ওপর কাদোতে দাঁড়ে থাকা যায় না। অতে কষ্ট করি কোনোরকম গরু-ছাগল কেনাবেচা করুছি। এই হাট থাকি তো সরকারের কামাই কম হয় না। তা সমস্যাগুলো সমাধান করলে কী হয়।’

হাটের ইজারাদার স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘এ বছর ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দিয়ে তারাগঞ্জ হাট ইজারা নিয়েছি। ইজারার বেশির ভাগ আসে পশুর হাট থেকে। কাদার কারণে হাটে গরু উঠছে কম। ফলে ইজারা আদায়ও কমে গেছে। বিষয়টি ইউএনও, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, হাটে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। আরও কাজ করা হবে।

হাটের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে ইউএনও রাসেল মিয়া বলেন, বৃষ্টি হলেই পশুর হাটে কাদাপানির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। কীভাবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ কমানো যায়, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।