চট্টগ্রামে চামড়া কেউ পুঁতে ফেললেন, কেউ রাস্তায় ফেলে চলে গেছেন
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার অলিগলি ঘুরে ৫২০টি চামড়া কিনেছিলেন মৌসুমি বিক্রেতা নুরুল আবসার। একেকটি চামড়া গড়ে ২০০ টাকার বেশি দরে কেনা পড়ে। তাঁর মোট খরচ হয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু একটা চামড়াও তিনি বিক্রি করতে পারেননি। আজ রোববার নগরের আতুরার ডিপো এলাকায় সড়কে চামড়া ফেলে দিয়ে তিনি বাড়ি চলে যান।
সকাল নয়টায় আতুরার ডিপো এলাকায় গিয়ে নুরুল আবসারের সঙ্গে কথা হয়। তখনো তিনি আড়তদারের প্রতিনিধিদের অনুরোধ করছিলেন চামড়া নিতে। কেউ নেননি। নুরুল আবসার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শনিবার রাত ১১টায় তিনি চামড়া নিয়ে নগরের আতুরার ডিপো এলাকায় পৌঁছান। সেই থেকে চামড়া বিক্রি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫০ টাকাও কেউ দিতে চাইছেন না। তাঁর কাছে ছোট, মাঝারি, বড়—তিন আকারের চামড়াই আছে।
নুরুল আবসার ছোট দুটি পিকআপে করে এই চামড়া আনেন। সঙ্গে আরও দু–তিনজন এসেছিলেন। তিনি জানান, চা খাওয়ার টাকাটাও তুলতে পারছেন না। এভাবে লোকসান হবে, তিনি ভাবেননি।
পরে বেলা সাড়ে ১১টায় আবার যোগাযোগ করলে নুরুল আবসার জানান, চামড়া বিক্রি হয়নি। সড়কে ওপর ফেলে রেখে তিনি চলে যাচ্ছেন বাড়িতে। তাঁর পুরো টাকাই লোকসান হলো।
শুধু নুরুল আবসার নন, নগরের আতুরার ডিপো, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, পতেঙ্গার অনেক মৌসুমি বিক্রেতা কেনা দামেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। কেউ চামড়া পুঁতে ফেলেছেন। কেউ রাস্তায় ফেলে চলে গেছেন। অবশ্য কেউ কেউ লোকসানে বিক্রি করেছেন।
ঈদের দিন চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে বসেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রিবাট্টা হয় চৌমুহনী এলাকায়। অলিগলি থেকে চামড়া কিনে এখানেই এনে জড়ো করেন মৌসুমি বিক্রেতারা। পরে আড়তদার কিংবা তাঁদের প্রতিনিধিরা এসে এ চামড়া নিয়ে যান। চামড়া মূলত নিয়ে যাওয়া হয় নগরের আতুরার ডিপো এলাকায়। সেখানে রয়েছে বড় আড়ত। উপজেলা থেকেও চামড়া আসে এসব আড়তে।
আরেক মৌসুমি বিক্রেতা দিদারুল আলম ২ লাখ ২০ হাজার টাকার চামড়া কিনেছিলেন। একটিও বিক্রি হয়নি। শেষমেশ সড়কের ওপর রেখে তিনি বাড়ি চলে গেছেন। তাঁর বাড়ি হাটহাজারীর কাটিরহাট এলাকায়। দিদারুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো আড়তদার দরাদরিও করেনি। বড় ধরা খেলাম।’
চৌমুহনীর মৌসুমি বিক্রেতা মোহাম্মদ হান্নান চামড়া কিনেছিলেন ২০টি। কেনা পড়ে গড়ে ৪০০ টাকা দরে। একটিও বিক্রি করেননি তিনি। হান্নান জানান, তিনি মোটামুটি মাঝারি আকারের চামড়া কিনেছিলেন। আড়তদারেরা কেউ প্রতিটি ২০০, কেউ ১০০ টাকা বলেছিলেন। এ কারণে তিনি দেননি। শেষে চামড়াগুলো পুঁতে ফেলেছেন।
তবে ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ বেলাল প্রতিটিতে ৫০ টাকা লোকসান হলেও বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি বড়-ছোট মিলিয়ে শ খানেক চামড়া কিনেছিলেন এবার। কেনা পড়েছিল গড়ে ৪৫০ টাকা দরে। অনেক দরাদরি করে শেষ পর্যন্ত চামড়াগুলো ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
মোহাম্মদ বেলাল আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫০ টাকা কম হলেও চামড়াগুলো বিক্রি করতে পেরেছি। এতে শুকরিয়া। অনেকে অর্ধেক দামও পাননি। কেউ কেউ চামড়া ফেলে দিয়ে চলে গেছেন।’
অন্যদিকে আরেক মৌসুমি বিক্রেতা মোহাম্মদ মনজু মিয়া অর্ধেক দামও পাননি। তিনি সব মিলিয়ে ১০০টি চামড়া কিনেছিলেন। কেনা পড়েছিল গড়ে ৫০০ টাকা দরে। গতকাল সারা দিন চেষ্টা করেও কেনা দাম তুলতে পারেননি। পরে রাতে আড়তদারের এক প্রতিনিধিকে প্রতিটি ১২০ টাকা দরে গছিয়ে দেন। মোহাম্মদ মনজু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ মামুন প্রথম আলোকে বলেন, এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেল।
মৌসুমি বিক্রেতারা দাম না পাওয়ার বিষয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অনেকেই বেশি দামে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। তাই ক্রেতা পাননি। আবার অনেকে দেরিতে চামড়া আনেন। এতে চামড়া পচে গেছে। তবে তাঁরা শুরুতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিয়েও একেকটি চামড়া কিনেছেন। আবার ২০০ টাকায়ও চামড়া নিয়েছেন।
সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, এবার চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চামড়া পাওয়া গেছে। সংকট হয়নি। তবে মৌসুমি বিক্রেতারা কেউ কেউ বাড়তি দাম ধরে রেখেছিলেন।