সীতাকুণ্ডের সেই ইয়ার্ড বন্ধ ঘোষণা, ২৬ লাখ টাকা জরিমানা

সীতাকুণ্ডের এস এন করপোরেশন নামের জাহাজভাঙা কারখাণায় বিস্ফোরণে দগ্ধ হন ১২ জন শ্রমিক। এর মধ্যে মারা গেছেন ছয়জনছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরীর মালিকানাধীন এস এন করপোরেশন নামে জাহাজভাঙা কারখানার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। একই আদেশে প্রতিষ্ঠানটিকে ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

৭ সেপ্টেম্বর এস এন করপোরেশনের শীতলপুর ইউনিটে জাহাজ কাটার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পর ১৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় এ আদেশ দেয়। জরিমানা ও বন্ধের নির্দেশনার বিষয়টি আজ সোমবার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।

ওই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন আরও ছয় শ্রমিক-কর্মচারী। ঘটনার পর শিল্প মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনপ্রাপ্তির পর এস এন করপোরেশনকে ঘটনার জন্য জরিমানা করা হয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সঞ্জয় কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সার্বিক পর্যালোচনা করে এস এন করপোরেশনের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনায় শ্রম আইন অনুযায়ী নিহত শ্রমিকদের সাত লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা রয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত শ্রমিকদের ১২ মাসের মজুরি ও চিকিৎসা খরচ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

এস এন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বরকত উল্লাহ দাবি করেছেন, নিহত শ্রমিকদের বিধি অনুযায়ী যাবতীয় পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজনকে ইতিমধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা কোম্পানি থেকে করা হচ্ছে।

এস এন করপোরেশনের মালিক শওকত আলী চৌধুরী। গত ১০ বছরে এই জাহাজভাঙা প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ইউনিটে ১৬ শ্রমিক–কর্মচারী মারা গেছেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, দুর্ঘটনার সময় সাবধানতার অভাবের পাশাপাশি শ্রমিকদের সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ছিল না। জাহাজের পাম্পহাউসটি পুরোপুরি গ্যাসমুক্ত না করেই কাটা হচ্ছিল বলে জানা গেছে।

শীতলপুরের তেঁতুলতলায় বিস্ফোরণের পরপর সেদিন ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগেই দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, তেলের ট্যাংকারটির ইঞ্জিনকক্ষে একদল লোক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছিলেন। ইঞ্জিনকক্ষে সব সময় তেল বা গ্যাসের গন্ধ থাকে। এ সময় কক্ষটির বাইরে কাটার কাজ চলছিল। ওখান থেকে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়ে ইঞ্জিনকক্ষের গ্যাসে বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৮ এবং বিপজ্জনক বর্জ্য ও জাহাজভাঙার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা অনুযায়ী জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চত করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের পিপিই (সুরক্ষা পোশাক) পরিধান, মাথায় হেলমেট দেওয়া, গ্লাভস, গামবুট পরিধান অন্যতম। এ ছাড়া সম্পূর্ণ গ্যাস ও বিস্ফোরকমুক্ত করে জাহাজ কাটার কথাও বলা হয়েছে।