নৌকা নেই, তবু চাপে লাঙ্গল

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মুনিম চৌধুরীকে ছাড় দিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মুশফিক হোসেন চৌধুরীকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। তিনি এখানে শক্তিশালী প্রার্থী। তাঁর পাশে রয়েছেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা।

মুনিম চৌধুরী লাঙ্গল ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ঈগল প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে এখানে ভোটের মাঠে রয়েছেন গাজী মোহাম্মদ শাহেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মোস্তাক আহমেদ ফারকানী ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. নুরুল হক। ভোটের মাঠে তাঁদের কোনো অবস্থান নেই বলেই চলে।

এখানে বেশি আলোচনায় আছেন মুনিম চৌধুরী ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। অপর প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহেদ এ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে। তাঁর বড় ভাই গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। মোস্তাক আহমেদ ফারকানী নবীগঞ্জ উপজেলার মান্দারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। মো. নুরুল হক হবিগঞ্জ শহরের গোপীনাথ এলাকার বাসিন্দা এবং হবিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য।

এ আসনে মাঠপর্যায়ে মুনিম চৌধুরীর পরিচিতি তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাপার সংসদ সদস্য হন। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এ নেতাকে এবারের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে গিয়ে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরীর দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এ হিসেবে তিনি এলাকায় পরিচিত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুনিম চৌধুরীর জন্য জেলা আওয়ামী লীগ, নবীগঞ্জ ও বাহুবল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কাজ করছেন। তাঁরা সভা-সমাবেশ করে এ প্রার্থীর পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

গত শনিবার নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ শহরের হাজারি কমিউনিটি সেন্টারে সাংগঠনিক এক সভার আহ্বান করে। পাশাপাশি একই দিন বাহুবল আওয়ামী লীগও উপজেলা সদরে বাজারে এক সভার আহ্বান করে। দুটি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির। উপস্থিত ছিলেন জাপার প্রার্থী মুনিম চৌধুরী। দুটি সমাবেশেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাপার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হবিগঞ্জ-১ আসনে আমাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দলীয় কোনো প্রার্থী নেই। তাই আমরা আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের জাপা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলেছি। এবং লাঙ্গল প্রার্থীর পক্ষে আছি।’

এদিকে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁর পক্ষে বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরিদ তালুকদার, যুবলীগ নেতা মোশাহিদ আলী ও অলিউর রহমানসহ কিছু নেতা-কর্মী কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে এ স্বতন্ত্র প্রার্থী এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর বাবা প্রয়াত মানিক চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ হিসেবে দলের প্রবীণ নেতা-কর্মীদের কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ভোটারদের একটি অংশ তাঁর হয়ে মাঠে কাজ করছে।

মুনিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এ সময় এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার প্রার্থী হয়েছি। আমার এলাকার জনগণ আমাকে এবারও জয়ী করবে বলে আশা করি।’

আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, তিনি সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পরিচালনা করেছেন। পাশাপাশি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়া এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন। তিনি আওয়ামী লীগের মানুষ হওয়ায় দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাঁর পাশে আছেন ও কাজ করছেন।