নতুন জাতের আনারস চাষ বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন

দেশে বর্তমানে উৎপাদিত আনারস যেখানে পাকার পর মেয়াদ থাকে এক সপ্তাহ, সেখানে এমডি-২ জাতের আনারস এক মাস সংরক্ষণ করা যায়।

টাঙ্গাইলের মধুপুরে নতুন জাতের আনারস এমডি-২ চাষ করে সফল হয়েছেন চাষিরা। সম্প্রতি উপজেলার মহিষমারা গ্রামের ছানোয়ার হোসেনের বাগান থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মধুপুরে এবার নতুন জাতের আনারস ‘এমডি-২’ চাষ করে সফল হয়েছেন চাষিরা। ফলে এ আনারস চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। বিদেশে এই আনারস রপ্তানির স্বপ্নও দেখছেন তাঁরা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফিলিপাইনের এমডি-২ জাতের আনারস প্রাকৃতিকভাবেই দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়। দেশে বর্তমানে উৎপাদিত আনারস যেখানে পাকার পর মেয়াদ থাকে এক সপ্তাহ, সেখানে এমডি-২ জাতের আনারস এক মাস সংরক্ষণ করা যায়। তাই এ আনারস বিদেশে রপ্তানি করা সহজ হবে।

মধুপুরের পাহাড়ি এলাকার জমিতে প্রচুর আনারস উৎপাদিত হয়। এবারও ৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন জাত এমডি-২ আনারস চাষ করা হয়েছে ১২ হেক্টরে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে এমডি-২ জাতের আনারসের চারা কৃষি বিভাগ আমদানি করে। পরে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মধুপুরের কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে চারা বিতরণ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ১০৭ জন কৃষককে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ চারা দেওয়া হয়। পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২০ জন কৃষককে ২ লাখ ৭০ হাজার চারা দেওয়া হয়। মধুপুরের মাটি আনারস চাষের উপযোগী। সেই সঙ্গে প্রতিবছর প্রচুর আনারস উৎপাদিত হয়। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে অনেক আনারস নষ্ট হয়ে যায়। তাই বিদেশের বাজার ধরার জন্য নতুন জাতের এমডি-২ আনারস চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কারণ, এই আনারস পাকার পর প্রাকৃতিকভাবেই এক মাস সংরক্ষণ করা যায়। প্রথম পর্যায়ে যে চারা বিতরণ করা হয়েছিল, তার ফল এখন বাজারে আসতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন জাতের এই আনারস নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল কৃষকদের মধ্যে। কিন্তু এখন আর সে শঙ্কা নেই। আরও অনেকেই এই জাতের আনারস চাষের পরিকল্পনা করছেন।

পীরগাছা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, চারাগুলো যখন কৃষি বিভাগ থেকে পেয়েছিলেন, তা ছিল ফ্যাকাশে। তিনি ভেবেছিলেন, এ চারায় ভালো ফল পাবেন না। পাঁচ হাজার চারা রোপণ করে স্বাভাবিক যত্ন করেন। এখন আনারস পাকতে শুরু করেছে। এতে তিনি খুবই খুশি।

মহিষমারা গ্রামের কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, নতুন জাতের এই আনারস চাষ করে ভালো ফল পেয়েছেন। তিনি আশা করছেন, আগামী বছর এই আনারসের গাছগুলো এ দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে আরও বেশি মানিয়ে যাবে। এতে ফল ভালো পাবেন। এ আনারস রপ্তানি করা শুরু হলে তিনিসহ এ অঞ্চলের চাষিরা লাভবান হবেন।

গত বুধবার মধুপুরের আনারসের পাইকারি হাট গারো বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এমডি-২ জাতের আনারস চাষিদের অনেকেই এনেছেন। পাইকাররা কেটে খেয়ে স্বাদ পরীক্ষা করে আনারস নিচ্ছেন।

আনারস ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানান, নতুন জাত, তাই অনেকেই কেনার আগে খেয়ে দেখে নিচ্ছেন। তবে সবাই এই নতুন আনারসের স্বাদের প্রশংসা করছেন।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল-মামুন রাসেল জানান, মধুপুরে যে পরিমাণ আনারস উৎপাদিত হয়, চাষিরা বাজারজাত করতে না পারায় কাঙ্ক্ষিত মূল্য অনেক সময় পান না। দেশীয় জাতের আনারস পাকার পর খুব বেশি দিন টেকে না। কিন্তু নতুন জাতের এই আনারস এক মাস পর্যন্ত ঠিক থাকে। তাই এটি বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। ইতিমধ্যেই এ আনারস বিদেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।