লিবিয়ায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু, সিরাজগঞ্জের বাড়িতে চলছে মাতম
লিবিয়াপ্রবাসী নাজমুল হোসেনের (২৫) সঙ্গে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে কথা হয় তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তারের। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার ভোরে খবর আসে, রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন নাজমুল। পরে সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সেই থেকে অনবরত কান্না করে যাচ্ছেন সুমি।
নাজমুলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের বেতুয়া দক্ষিণপাড়া এলাকায়। সেখানে তাঁর পরিবারে মা–বাবা ও এক বোনের সঙ্গে স্ত্রী ও দুই বছর বয়সী একটি ছেলে আছে।
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বেতুয়া দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদসংলগ্ন নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একা একা উঠানে খেলছে নাজমুলের শিশু ছেলেটি। শিশুটির দিকে অদূরে নজর রাখছেন তাঁর দাদা লোকমান হোসেন আর মামা রফিকুল ইসলাম।
নাজমুলের বাবা লোকমান বলেন, এক ছেলে ও মেয়ে নিয়ে তাঁদের ভালোই চলছিল। রায়গঞ্জ বাজারে কাঁচামালের ব্যবসা করেন তিনি। ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র অবস্থায় নাজমুল রায়গঞ্জ বাজারে কম্পিউটারে সেবা প্রদানের জন্য একটি দোকান দিয়েছিলেন। পরে এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক পাসের পর বাবার ব্যবসায় সহায়তা করার কথা বলা হয়েছিল। তবে কথা শোনেননি নাজমুল। পরিচিত ও আত্মীয়দের পরামর্শে ভাগ্য বদলানোর উদ্দেশ্যে লিবিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যটক ভিসায় লিবিয়ায় প্রবেশ করেন তিনি।
নাজমুলের স্ত্রীর ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাধা দিতে পারি, এ জন্য নাজমুল লুকিয়ে লুকিয়ে বিদেশে যাওয়ার সব কাজ শেষ করেছে। এখন বোন আর ভাগনের কী হবে, এই চিন্তা করব, নাকি ভগ্নিপতির মরদেহ কীভাবে নিয়ে আসব সেই চিন্তা করব?’
খানিক এগিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরে কাঁদছেন নাজমুলের মা ও স্ত্রী। মাঝেমধ্যে মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁরা। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন।নাজমুলের মা জানান, এমন হবে জানলে আগে ছেলেকে ধারদেনা করে দূর দেশে পাঠাতেন না।
নাজমুলের স্ত্রী সুমি খাতুন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার অনেক কথা হলো। ছেলে, সংসার আর আগামীর পথচলা নিয়ে অনেক কথা হলো। কিন্তু এরপর আর কথা হয়নি, কোনো দিন কথা হবেও না আর।’ এভাবে তাঁর চলে যাওয়া মানতেই চাইছেন না তিনি। এখন ছেলেকে নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন উপস্থিত লোকজনের কাছে জানতে চান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বুঝে না বুঝে ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন জানিয়ে স্থানীয় শিক্ষক বিদ্যুৎ কুমার মোদক বলেন, লিবিয়ায় এমন ঘটনা বেশি হচ্ছে। এখন নাজমুলের মরদেহ দেশে আনতে পরিবারটির হিমশিম অবস্থা। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।