কালিয়াকৈর বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, এক নেতা গ্রেপ্তার
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার বিকেলে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পারভেজ আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপির একটি পক্ষ বিক্ষোভ করেছে।
বিএনপি কর্মী উপজেলার চন্দ্রা পলানপাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা রিপন মিয়া মামলাটি করেন। মামলায় পারভেজ আহমেদকে প্রধান করে ছয়জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০ থেকে ৩০ জনকে।
এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন গাজীপুর জেলা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম, সূত্রাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আকাশ, কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য মো. ফয়সাল, সূত্রাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য মো. রনি, মো. আকাশ ও হিজলতলী গ্রামের রানিন হোসেন।
বাদী মামলায় উল্লেখ করেছেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলে গত রোববার দুপুরে আহ্বায়ক কমিটি মিছিল বের করে। মিছিলটি দুপুর ১২টার দিকে কালিয়াকৈর সাহেববাজার বাইপাস রোড এলাকায় পৌঁছালে এহাজারনামীয় আসামিরাসহ অজ্ঞাত ২০-৩০ জন ককটেল, রামদা, চাপাতি, ধারালো ছুরি, কুড়াল, রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পথ রোধ করে। একপর্যায়ে তারা হামলা চালায়। এতে মামলার বাদীসহ কয়েকজন আহত হন।
নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, মামলা দায়েরের আগেই কালিয়াকৈর থানা ও গাজীপুর ডিবি পুলিশ রোববার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হেলাল উদ্দিন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদকে আটক করে। তবে সকাল আটটার দিকে ডিবি পুলিশ হেলাল উদ্দিনকে তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর মামলা দায়ের করার পর পুলিশ ওই মামলায় পারভেজ আহমেদকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শরিফুল হক জানান, বিএনপি নেতা পারভেজ আহমেদকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা দাবিকে করে কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির একটি অংশ প্রতিবাদ সভা করেছে। এ সময় তাঁরা উপজেলার বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হেলাল উদ্দিনকে আটক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান। সোমবার বিকেল চারটায় উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘১৬–১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যেসব নেতা-কর্মী অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, এই কমিটি এবং দলের প্রতি আমাদের শতভাগ আনুগত্য আছে। কিন্তু যখন দেখলাম আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে, কমিটিতে ৮ থেকে ১০ জন আওয়ামী লীগের দোসর রয়েছে, যাদের ছবি আমরা দেখাতে পারব, যখন কর্মীরা এগুলো দেখেছে তখন তাদের রক্তক্ষরণ হয়েছে। ছাত্ররাজনীতি থেকে আজকে আমরা বিএনপি নেতা হয়েছি। ১৭ বছর আমার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। জেলজুলুম উপেক্ষা করে নেতা-কর্মীরা মাঠে ছিলেন। এ মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা ত্যাগী দলের নিবেদিতপ্রাণ। আর যারা মামলা করেছে তারা হচ্ছে ৫ আগস্টের পর দলে আসা হাইব্রিড নেতা।’
জেলার কয়েকটি উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি ওঠার বিষয়ে জানতে গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম ফজলুল হকের মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম রফিকুল ইসলাম ফোন ধরেননি।
এদিকে গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাকে পারভেজ আহমেদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দলে কোন্দল, সংঘাত সৃষ্টিসহ দলীয় নীতি এবং আদর্শবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পারভেজ আহমেদকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।