অন্য খবর
গাছের চারা লাগানো ও পরিচর্যাই তাঁর নেশা
এই বৃক্ষপ্রেমী ব্যক্তির নাম সেরাজুল ইসলাম হাওলাদার। বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়। ২০ বছর ধরে তিনি গাছের চারা লাগাচ্ছেন।
সকাল হলেই খন্তা হাতে বের হয়ে পড়েন। সড়কের পাশ, অন্যের বাড়ি—যেখানেই খালি জায়গা পান, গাছের চারা লাগান তিনি। ফলদ, ঔষধিসহ সব প্রজাতির গাছ লাগান। গাছ লাগানো তাঁর যেন নেশায় পরিণত হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় এবং সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য গাছের চারা লাগাচ্ছেন তিনি। সারা দিন গাছের চারা লাগানো ও পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন। ২০ বছর ধরে আনন্দ নিয়ে তিনি কাজটি করে যাচ্ছেন।
এই বৃক্ষপ্রেমী ও পরিবেশবান্ধব ব্যক্তির নাম সেরাজুল ইসলাম হাওলাদার। বয়স ৮০ বছর। এই বয়সে যেখানে মানুষ ঘরে শুয়ে–বসে সময় কাটান, সেখানে তিনি অবিরাম গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন। এ কাজে বয়স কোনো বাধা হতে পারেনি। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার এক প্রত্যন্ত এলাকায়। তিনি ওই উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব আটখালী গ্রামে বাস করেন। গাছ লাগানোর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ থাকায় এলাকার মানুষ তাঁকে সম্মান করেন। এই কাজের জন্য ইউনিয়নের মানুষের কাছে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
পূর্ব আটখালী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, কামিল পাস করার পর দীর্ঘদিন ইমামতি করেন। ইমামতি থেকে অবসর নেওয়ার পর গাছ লাগানো শুরু করেন তিনি।
সাত ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট সেরাজুল। স্ত্রী ও চার মেয়ে নিয়ে তাঁর পরিবার। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে, ছোট মেয়ে হামিদা বেগম স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন।
সম্প্রতি একদিন সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সেরাজুল বাড়িতে নেই। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানালেন, এখন বাড়িতে পাবেন না তাঁকে। গাছের চারা নিয়ে বের হয়েছেন। পাশের বাড়ির লোকজনকে নিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর খুঁজে পাওয়া যায় সেরাজুলকে। হাতে তিনটি নারকেল চারা ও খন্তা। গাছ লাগানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজছেন তিনি। সড়কের পাশে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
গাছের চারা লাগানোর এই ভালো কাজে কীভাবে যুক্ত হলেন, জানতে চাইল মুচকি হাসেন সেরাজুল। তিনি জানান, ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৬ সালে কামিল পাস করেছেন। এরপর গ্রামে এসে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেছেন। শুধু নিজের বাড়িতেই নয়; অন্যের বাড়িতে, সড়কের পাশে—মূলত খালি জায়গা পেলেই সেখানে গাছ লাগান তিনি।
এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন বলে দাবি করেন সেরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, ডাকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তিনি নারকেল, সুপারি, পেয়ারা, জাম্বুরা, গাবগাছ ছাড়াও তালগাছ, মেহগনি, চাম্বল, সুন্দরীগাছও লাগিয়েছেন। তাঁর নিজের বাড়িতে সুন্দরীগাছ রয়েছে।
অনেক দিন আগেই গাছ লাগানোর ভাবনা সেরাজুল ইসলামের মাথায় আসে। কিন্তু নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় অবসর নেওয়ার আগে সেভাবে গাছের চারা লাগানো শুরু করতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে অনেক কারণেই গাছ লাগানোর ভাবনা আসে। সড়কের পাশে গাছ লাগিয়েছি পথিককে ছায়া দেওয়ার জন্য। গাছ লাগালে পরিবেশও ভালো থাকে। এ ছাড়া সরকারের নির্দেশনা রয়েছে, কোনো জায়গা ফেলে রাখা যাবে না। এসব বিষয় চিন্তা করেই এখন বেশি করে গাছের চারা লাগাতে শুরু করি।’ তবে ১০–১১ বছর বয়সে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সময় থেকে গাছ লাগানোর প্রতি ঝোঁক তাঁর।
একসময় বাজার থেকে চারা কিনে রোপণ করলেও এখন অর্থের অভাবে তা পারছেন না সেরাজুল। গাছের চারা কিনতে না পারায় এখন বাড়িতেই চারা উৎপাদন করছেন তিনি। সেরাজুল জানান, তিনি গাছ বিক্রি করেও কিছু টাকা আয় করেন। তবে যাঁদের জায়গায় গাছ লাগিয়েছিলেন, তাঁদেরও বিক্রির অর্ধেক ভাগ দিচ্ছেন তিনি। বাকি টাকা বাড়িতে চারা উৎপাদনে ব্যয় করছেন।
এলাকার বাসিন্দা লিটন সরদার জানান, সেরাজুল বৃদ্ধ বয়সেও বিভিন্ন এলাকায় ছুটে গিয়ে গাছ লাগাচ্ছেন। তাঁর বাড়ির আশপাশেও অন্তত ২০টি গাছ লাগিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল-হেলাল বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেরাজুলকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা ও বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে গাছের চারা ও গাছ লাগানোর সরঞ্জাম দেওয়া হবে।