ছেলের আটকে রাখা রিকশা ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু
নোয়াখালীর সদর উপজেলায় পাওনা টাকার জন্য ছেলের আটকে রাখা রিকশা ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে পাওনাদারের ধাক্কায় এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় আজ বৃহস্পতিবার।
পুলিশ জানায়, নিহত নারীর নাম নূর নাহার (৪৫)। তিনি একই উপজেলার ৩ নম্বর নোয়ান্নই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোড়াপুর গ্রামের সামছুল হকের স্ত্রী। খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে পুলিশ ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ এক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
নূর নাহারের বড় ছেলে রুবেল বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে তাঁর বাবা আগে বেকারি থেকে বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে বিক্রি করতেন। তিনি তখন কাদির হানিফ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মো. মহিনের (৩৫) কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা ধার নেন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মহিন ৩০ হাজার টাকা পাওনা বলে দাবি করে আসছেন। এই ঘটনার জের ধরে মহিন সন্ত্রাসী ভাড়া করে মাইজদী হাউজিং এলাকা থেকে গতকাল বুধবার সকালে তাঁর ছোট ভাই বিপ্লবের রিকশা আটক করে নিয়ে যান।
রুবেলের অভিযোগ, রিকশা আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর বুধবার সকাল থেকে সারা দিন তাঁর মা রিকশাটি ছাড়িয়ে নিতে বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দেন। সন্ধ্যার দিকে তাঁর মা মহিনের কাদির হানিফ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাঁর হাতে-পায়ে ধরে রিকশা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় মহিন তাঁকে গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে তিনি ঘটনাস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে তাঁর মাকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নূর নাহারকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে পাওনাদার মহিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারকারী সুধারাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম প্রথম আলোকে বলেন, পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় পাওনাদার মহিন নূর নাহারের ছেলের রিকশা আটকে রাখেন। নারী রিকশা ছাড়াতে গিয়ে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। মৃতদেহের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিবারের অভিযোগ, ওই নারীকে টাকার জন্য ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মারা যাওয়া ওই নারীর লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।