৪০ বছর ধরে আচার বিক্রি করেন কুদ্দুস, আছে ২৭ পদের আচার

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া সায়াম প্লাজা মার্কেটের সামনে ৪০ বছর ধরে আচার বিক্রি করেন আবদুল কুদ্দুস
ছবি: প্রথম আলো

আম, বরই, চালতা, কতবেল, কাঁচা মরিচ, নাগা মরিচসহ ২৭ পদের আচার বিক্রি করেন আবদুল কুদ্দুস। গত ৪০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া সায়াম প্লাজা মার্কেটের সামনে আচার বিক্রি করেন তিনি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন বলে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সব শ্রেণির মানুষই তাঁর আচারের ক্রেতা। সুনামের কারণে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে তাঁর কাছ থেকে আচার কেনেন।

কুদ্দুসের কাছে আমের ফলি, আমের তেলের আচার, আমের মোরব্বা, টক-ঝাল বরই, টক-ঝাল জলপাই, চালতার মোরব্বা, চালতার ঝুরি, তেঁতুল, কতবেল, আমড়ার টক-ঝাল, আলুবোখারা, কাঁচা খেজুর, রসুন, কাঁচা মরিচ, নাগা মরিচ, সাতকরার আচারসহ ২৭ পদের আচার আছে। তিনি সর্বনিম্ন ৩০ টাকার আচার বিক্রি করেন। বয়ামে আচারের ধরন অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

কুদ্দুস বলেন, আচারে ধুলাবালু ও মাছি যাতে না বসতে পারে, এ কারণে কাচের ভেতরে আচার রাখেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কারণে সবাই তাঁর কাছ থেকে আচার কিনে খান। নিজেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন, পরিপাটি হয়ে থাকেন।

মায়ের সঙ্গে আচার খেতে এসেছেন শহরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তানহিয়াদ তাব্বাস। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই আচারের স্বাদ অন্য রকম। ছোটবেলা থেকে খাচ্ছেন তিনি। বিক্রেতা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন বলে খেতে গিয়ে কোনো অস্বস্তি হয় না।

আচার তৈরিতে কুদ্দুসকে সহযোগিতা করেন তাঁর স্ত্রী সুফিয়া আক্তার। তিনি আচার তৈরির উপকরণগুলো কাটাকাটি করে দেন। মসলাসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে আচার তৈরি করেন কুদ্দুস নিজে। প্রতিদিন তিনি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার আচার বিক্রি করেন বলে জানালেন। আচার বিক্রির শুরুর প্রসঙ্গে কুদ্দুস বলেন, ১৯৮৩ সালে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেন গোলাম কুদ্দুস ও সুফিয়া আক্তার। বিয়ের পর নারায়ণগঞ্জে স্ত্রীর বড় ভাই শহীদ হোসেনের বাড়িতে ওঠেন তাঁরা। পরে ৩০০ টাকা সুদে ধার নিয়ে আচার বানিয়ে বিক্রি শুরু করেন।

এখন এই দম্পতি শহরের খানপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে দুজন মারা গেছে। এখন এক ছেলে সবুজ ডেকোরেশনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ছোট ছেলে গোলাম মোরশেদ শহরের চাষাঢ়ায় জয়নাল ট্রেড সেন্টারে পোশাকের ব্যবসা করেন।

এই যে তাঁর আচারের এত সুনাম, সেটা কীভাবে সম্ভব হলো, জানতে চাইলে আবদুল কুদ্দুস বলেন, সবকিছু তিনি ও তাঁর স্ত্রী নিজ হাতে যত্ন নিয়ে তৈরি করেন। ভালো আচার তৈরি করতে হলে দুই হাতের সঙ্গে মনটাও পরিষ্কার লাগবে। তাহলেই ভালো আচার হবে।