মাকে হত্যার পর যেভাবে ২৭ বছর পালিয়ে ছিলেন বাদশা মিয়া

বাদশা মিয়া
ছবি: প্রথম আলো

মাকে হত্যার পর পালিয়ে যান বাদশা মিয়া। নাম পরিবর্তন করে বসবাস শুরু করেন ঢাকায়। ওই হত্যা মামলায় তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। পরে বাদশা মিয়া নতুন নামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেছিলেন। এভাবেই কেটে যায় প্রায় ২৭ বছর। কিন্তু তাঁর শেষ রক্ষা হয়নি। বাদশা মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আজ সোমবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাদশা মিয়া (৫৫) টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কালোহা গ্রামের হাসমত আলীর ছেলে। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর হাতে খুন হন তাঁর মা। বোনের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল বাদশা মিয়ার। বাঁশের লাঠি দিয়ে বোনকে আঘাত করতে যান তিনি। মা এসে সেই লাঠি কেড়ে নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠানে পড়ে থাকা দা নিয়ে মাকে কোপ দেন। এতে ঘটনাস্থলে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়।

ঘটনার পরই বাদশা মিয়া আত্মগোপনে চলে যান। গ্রেপ্তারের পর তিনি র‌্যাবকে জানিয়েছেন, মাকে হত্যার পর গ্রেপ্তার এড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। ঘটনার পর ঢাকার বাড্ডা এলাকায় মামা শ্বশুরের কাছে যান। কয়েক দিন পর তাঁর স্ত্রী ও শিশুসন্তানকেও সেখানে নেন। আলী আকবর নাম ব্যবহার করে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। সেখানে পাঁচ-ছয় বছর চাকরি করেন। পরে চলে যান আশুলিয়ার কান্দাইল এলাকায়। সেখানে ভাড়া বাসা থেকে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। কয়েক বছর চাকরি করার পর নিজে একটি চায়ের দোকান দেন। কান্দাইলের ঠিকানাতেই তিনি আলী আকবর নামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন।

আত্মগোপন অবস্থায় ২০০৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাদশা মিয়ার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এ দিকে টাঙ্গাইলে কর্মরত র‌্যাব-১৪–এর ৩ নম্বর কোম্পানি মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়। বাদশা মিয়ার খোঁজে র‌্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। নজরদারি করে বাদশা মিয়ার আত্মীয়স্বজনের ওপর। একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বাদশা মিয়ার অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

র‌্যাব-১৪–এর ৩ নম্বর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়েরের নেতৃত্বে গত শনিবার রাতে অভিযান চালানো হয় কান্দাইলে বাদশা মিয়ার ভাড়া বাড়িতে। গতকাল রোববার ভোরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। রফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়ের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে বাদশা মিয়া তাঁর প্রকৃত পরিচয় স্বীকার করেন। তিনি জানিয়েছেন, বিচারকাজ শুরু হলেও তিনি আদালতে আত্মসমর্পন করেননি। কারণ, মামলার খরচ চালানোর মতো টাকাপয়সা তাঁর ছিল না। তাঁর ধারণা ছিল, পলাতক অবস্থায় কয়েক বছর যাওয়ার পর কেউ তাঁকে খুঁজে পাবে না।

বাদশা মিয়াকে গতকাল দুপুরে কালিহাতী থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, আজ সকালে বাদশা মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন