ভর্তি-ইচ্ছুকদের সহায়তার কথা বলে দোকান থেকে ছাত্রলীগের চার নেতার চাঁদা আদায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে। দোকানিদের অভিযোগ, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সহায়তার নামে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা এসে চাঁদা আদায় করেছেন।

তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা বিষয়টি অস্বীকার করে বলছেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। উল্টো দোকানিদের জানিয়েছেন, তাঁদের নামে কেউ চাঁদা দাবি করলে আটকে রেখে জানাতে।

ছাত্রলীগের অভিযুক্ত চার নেতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ আল হাসান, নবাব আবদুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাশফিক আল তৌহিদ এবং মাদার বখ্শ হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তামিম খান। তাঁদের মধ্যে লাবণ ও তৌহিদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে সাদিক ও তামিম শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র ও দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন আহমদ একাডেমিক ভবন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবন, পুরাতন শেখ রাসেল স্কুল মাঠ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভ্রাম্যমাণ বিরিয়ানির দোকান, ডাবের দোকান, শরবতের দোকান, চটপটির দোকানসহ বিভিন্ন দোকান বসেছে। এসব দোকান থেকে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোটরসাইকেলে করে চার থেকে পাঁচজন নেতা এসে টাকা নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া একদিন চাঁদা দিলে অন্য দিন দেওয়া লাগবে না বলেও আশ্বাস দেন নেতারা। তাঁদের ছাড়া অন্য কেউ চাঁদা নিতে এলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলা হয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ডাব বিক্রেতা বলেন, চার থেকে পাঁচজন লোক এসে তাঁর কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন ছাত্রলীগ নেতারা এখানে ব্যবসা করতে হলে টাকা দিতে হবে বলে হুমকি দেন। পরে তিনি বাধ্য হয়ে তাঁদের এক হাজার টাকা দিয়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকা থেকে শরবত বিক্রি করতে আসা এক দোকানি বলেন, ‘পাঁচ থেকে ছয়টা বাইক নিয়ে সাত থেকে আটজন লোক এসে তাঁদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। আজ (গতকাল) টাকা দিলে আগামীকাল (আজ) টাকা দেওয়া লাগবে না বলে জানান তাঁরা। আশপাশের আরও অনেক দোকানির থেকেও টাকা নিয়েছেন তাঁরা। যাঁদের কাছে টাকা নিতে পারেননি, তাঁদের থেকে খাবার নিয়ে গেছেন।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘এই রকম কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। বরং আমি আর লাবণ (আবিদ আল হাসান) দোকানে দোকানে গিয়ে বলে এসেছি, আমার নামে কেউ চাঁদাবাজি করতে আসলে যেন আমাকে কল দেয়।’

ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তামিম বলেন, ‘আমার নাম করে অন্য কেউ এ কাজ করতে পারে। এ জন্য আমি দোকানিদের সতর্ক করে এসেছিলাম। কেউ আমার নাম করে টাকা চাইতে আসে, তাকে বেঁধে রেখে আমাকে কল দেবেন।’

সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ আল হাসান বলেন, ‘আমি কয়েক দিন ধরে সারা দিন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ছিলাম। এর আগেও শুনেছি, আমার নাম করে কেউ কেউ টাকা আদায় করেছে। তাই কয়েকজন দোকানিকে বলেছি, যারা আমার নাম করে চাঁদা নিতে আসে, তাদের আটকে রেখে আমাকে কল দিতে।’

আরেক ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমি গতকাল সারা দিন সভাপতির সঙ্গে ছিলাম। জীবনেও আমি চাঁদাবাজি করি নাই। কেয়ামতের দিন হলেও প্রমাণ হবে আমি এক পয়সাও কোথাও থেকে চাঁদা নিইনি।’

এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘সাদিক, লাবণ ও তৌহিদের মধ্যে কেউ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়। তবে তামিম গেছে কি না, আমি জানি না। যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।’