রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর দিলে প্রতিরোধ গড়ব: নুরুল হক
বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরু। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের একজন উপদেষ্টা ও একজন বিশেষ সহকারী এবং প্রেস সচিব দুই রকম বক্তব্য দেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য মানবিক করিডরের নামে যদি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলা হলে আমরা সব দল মিলে তা প্রতিরোধ গড়ব।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার ঈদগাঁ মাঠে গণ অধিকার পরিষদের গণসমাবেশ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ কথা বলেন নুরুল হক। তিনি বলেন, ‘গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার একটি বক্তব্য শুনেছি, মিয়ানমারে যুদ্ধ ও ভূমিকম্পর কারণে চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে কক্সবাজার থেকে রাখাইনের জন্য একটি মানবিক করিডর চাওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম এমন কথা জানিয়েছে।’
একই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন দাবি করে নুরুল হক বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সরকারের সঙ্গে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের কোনো সংস্থার বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা এ রকম আলোচনা করে নাই। প্রথমেই আমরা এমন বক্তব্যে আশ্চর্যান্বিত হয়েছি, উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সরকারের দিক থেকে এ রকম দুই ধরনের বা দ্বিমুখী বক্তব্য এসেছে। এটি আমাদের আরও শঙ্কায় ফেলেছে, আমরা আরও উদ্বিগ্ন হচ্ছি। তাহলে প্রকৃত ঘটনা নিয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছে কি না। মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য মানবিক করিডরের প্রকৃত ঘটনা নিয়ে সরকার কি লুকোচুরি খেলছে?’
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘যদি বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলা হয়, তবে আমরা সব রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং সব দল মিলে তা আমরা প্রতিরোধ গড়ব।’
নুরুল হকের ভাষ্য, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ চলছে জাতীয় ঐক্য-সংহতির ভিত্তিতে। রাষ্ট্র সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ এবং বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সব রাজনৈতিক দল আলাপ-আলোচনা করছে। ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে কিছু বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বলেও দাবি গণ অধিকার পরিষদের এই নেতার।
নুরল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার বিচার, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী দুর্বৃত্তদের বিচার লক্ষ করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে কক্সবাজারে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে রাখাইনে মানবিক করিডর নেওয়ার আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীল দুজনের দুই রকম বক্তব্য ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগটি আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাব। আমরা আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য জানিয়ে দিই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা বিন্দুমাত্র আপস করব না।’
মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ঈদগাঁ মাঠে গণ অধিকার পরিষদের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট মাঝির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ মুন্সি প্রমুখ।
সভায় আগামী নির্বাচনে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ৩০০ আসনে গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। গণ অধিকারের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ট্রাক মার্কায় ভোট দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান নেতারা। এ সময় শরীয়তপুর-২ আসনের গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী হিসেবে আখতারুজ্জামান সম্রাট মাঝির নাম ঘোষণা করেন নুরুল হক।